মহারাষ্ট্রের পর এবার পদ্ম শিবিরের নজরে কোন কোন রাজ্য

বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই টালমাটাল পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র সরকার। প্রশ্ন জাগছে মুখ্যমন্ত্রীর গদি নিয়ে। মহারাষ্ট্রে মহা সংকট দেখল গোটা দেশ। আস্থাভোটে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন উদ্ধব ঠাকরে।

এবার বিজেপির সাহায্যে শিবসেনার বিক্ষুব্ধ নেতা একনাথ শিন্ডে নতুন সরকার গড়বেন এটাই প্রত্যাশিত। অন্তত নতুন কোনও নাটক মঞ্চস্থ না হলে মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তেমনটাই হতে চলেছে। আর এটা স্পষ্ট বিজেপির ‘অপারেশন লোটাস’ ফের একবার সফল হল।

আর মহারাষ্ট্রের সফল চিত্রনাট্যের পর এবার বিজেপির টার্গেট কি ঝাড়খণ্ড ও রাজস্থান? যা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তবে শুধু এই দুটি রাজ্যই নয়, গেরুয়া শিবিরের নজরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। অন্তত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যে সেই চর্চা বেশ কিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে। কারণ শুভেন্দু ধারাবাহিকভাবে বলে চলেছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।

এই মন্তব্যের পেছনে কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ আছে, নাকি শুধুমাত্র বাজার গরম করার জন্যই শুভেন্দু এসব বলছেন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তবু বিরোধী দলনেতার মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে শুভেন্দু যে মন্তব্য করছেন পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে, তাতে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

মানুষের রায়ে একটা দল ক্ষমতায় আসার পর, বা কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিধায়ক ভাঙিয়ে বা ‘কেনাবেচা’ করে সেই সরকার ফেলে দেওয়া বা বিপক্ষকে সরকার গড়তে না দেওয়ার নজির একাধিকবার ঘটিয়েছে বিজেপি। যা রাজনৈতিক মহলে ‘অপারেশন লোটাস’ নামে পরিচিত।

এই পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর বিজেপি ঝাড়খণ্ড দখলের জন্য প্রবলভাবে ঝাঁপাবে। ঝাড়খণ্ডে গত বিধানসভা নির্বাচনে জেএমএম, কংগ্রেস এবং আরজেডি জোট হারিয়ে দেয় বিজেপিকে। প্রত্যাশিতভাবেই মুখ্যমন্ত্রী হন জেএমএমের হেমন্ত সোরেন। কিন্তু সরকার গঠনের কয়েক মাস পর থেকেই কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হেমন্তর কাজকর্ম নিয়ে।

একটা সময় কংগ্রেস ঝাড়খণ্ড সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেবে, কার্যত এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। কংগ্রেস বিধায়করা দিল্লি গিয়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন হাইকমান্ডের সঙ্গে। তবে সে যাত্রায় সমর্থন প্রত্যাহারের রাস্তা থেকে সরে এলেও তাঁদের ক্ষোভ যে কমেনি তা স্পষ্ট।

সূত্রের খবর বিজেপি সেই ক্ষোভকে তাদের পক্ষে কাজে লাগাতে নতুন করে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এছাড়া জেএমএম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকেই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে জেএমএম’কে পাশে টেনে ঝাড়খণ্ডে সরকার গড়ার চেষ্টা করতে পারে বিজেপি, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ ঝাড়খণ্ড দখলের জন্য জোড়া চেষ্টা বিজেপি করতে পারে বলে একটি সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর ঝাড়খণ্ডে এই নীতিতে সাফল্য আসলে বিজেপির টার্গেট হবে রাজস্থান। বছর দুয়েক আগে শচীন পাইলট কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন, এই বাতাবরণ অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু যত জন বিধায়ক শচীনের পক্ষে ছিলেন সেই সংখ্যা দিয়ে বিজেপির উদ্দেশ্য সাধন হতো না। তাই সে যাত্রায় শচীন কংগ্রেসেই থেকে যান বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। সামনের বছর রাজস্থানে নির্বাচন। তাই মহারাষ্ট্রে সাফল্য পাওয়ার পর বিজেপি রাজস্থানের দিকে বাড়তি নজর দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে আগের বারের মতোই শচীন পাইলটের অনুগামী বিধায়কদের দিকেই নজর থাকবে তাদের।  

২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর অরুণাচল প্রদেশ দিয়ে বিজেপির ‘অপারেশন লোটাস’ শুরু হয়। কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে সরকার গড়ে বিজেপি। এরপর মণিপুরে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার গড়তে পারেনি। ২০১৭ সালে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে সরকার গড়ে বিজেপি।

আর মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটকে বেশ কিছুদিন কংগ্রেস সরকার চালানোর পরেও বিধায়ক ভাঙিয়ে দুটি সরকারই ফেলে দেয় বিজেপি। রাতারাতি সেখানে বিজেপি শাসন কায়েম হয়। তবে মহারাষ্ট্রে ২০১৯ সালে বিজেপি সে কাজে সফল হয়নি। সেবার ‘অপারেশন লোটাস’ ব্যর্থ হয়েছিল। তবে এবার বিজেপির উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপির হাত এবার কোথায় গিয়ে পড়ে, সেদিকেই নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।