গেরুয়া শিবির ছাড়ছেন পনেরোজন নেতা

সময় একদমই ভালো যাচ্ছে না রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের। একের পর এক ভাঙ্গনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। দলচ্যুত হচ্ছেন বহু নেতা। ইতি মধ্যেই আর কদিন পরেই ফের বঙ্গ সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা অমিত শাহ। কিন্তু এই সফরের ঠিক আগে আগেই বড়োসড়ো ভাঙ্গনের মুখে পড়ল পদ্ম দল। জানা যাচ্ছে, জেলা সভাপতির সঙ্গে বিবাদের জেরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের ১৫ বিজেপি নেতা পদত্যাগ করেছেন বিজেপি দল থেকে। ইতিমধ্যেই তাঁরা তাঁদের পদত্যাগপত্র বিজেপি জেলা সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে খবর।

বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, ওই ১৫ জন বিজেপি নেতার সঙ্গে সম্প্রতি বিবাদ শুরু হয়েছে জেলা সভাপতি তাপস মিত্রের। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জেলা সভাপতি নাকি টাকার বিনিময় প্রার্থীর টিকিট দিয়েছে পুরসভা নির্বাচনের সময়। আর তাতেই জোর ক্ষেপেছেন এই ১৫ জন বিদায়ী বিজেপি নেতা। জেলা সভাপতির সঙ্গে বিবাদ সম্প্রতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শেষমেশ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, রবিবার যে সমস্ত বিজেপি নেতা নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাঁর মধ্যে রয়েছেন জেলা কমিটির সদস্যসহ উত্তর ২৪ পরগনার রাজ্য কমিটির সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি।

অসন্তুষ্ট নেতা যারা রবিবার নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের দাবি, বারাসাত জেলা সভাপতি তাপস মিত্র পুরভোটের সময় মোটা টাকার বিনিময়ে সিট বিক্রি করেছেন। এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ এক প্রাক্তন বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। গত ২৭ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং এ ধরনের দুর্নীতি আমি কখনোই মেনে নিতে পারিনা।’ তিনি আরও জানিয়েছেন যে বিজেপি জেলা সভাপতি স্বইচ্ছায় এই সমস্ত কাজ করছেন। 

অন্যদিকে বারাসাত জেলা সভাপতি তাপস মিত্রের পাল্টা দাবি, তিনি নাকি পদত্যাগ প্রসঙ্গে কিছু জানেনই না। তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনও বিজেপি নেতা পদত্যাগপত্র জমা দেননি। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে। অন্যদিকে এই বিষয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন সুকান্ত মজুমদারও। রাজ্য সভাপতিকেও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত।

তবে বারাসাত জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের যে আঙুল উঠেছে, এ ধরনের অভিযোগ গেরুয়া শিবিরে নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষও একই অভিযোগ তুলে আরও দু’জনের সঙ্গে রাজ্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত ভরাডুবি শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। একের পর এক নেতা মন্ত্রী হয় দলবদল করে নাম লিখিয়েছেন শাসকদলের খাতায়। অন্যথা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন পদ্ম শিবির থেকে।

এই দলত্যাগ, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হঠাৎ করে ভিন্নমত পোষণ সবকিছু মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে আজ বিজেপি কার্যত কোণঠাসা। অনেকে মনে করছেন বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পিছনে অনেকাংশেই দায়ী রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই সুকান্ত মজুমদারকে বাংলায় বিজেপি দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্য সভাপতির পদ থেকে কার্যত সরিয়ে দেওয়া হয় দিলীপ ঘোষকে। সূত্রের খবর, দলের ভিতরে অনেক নেতা মন্ত্রীই নাকি বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। আর তার জেরেই দলত্যাগ, পদত্যাগ বিজেপি দলের মধ্যে কার্যত রোজগারের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।