রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর পর কষ্টে ‘কেষ্ট’৷ গরু পাচার মামলায় নিজ গড় থেকে নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল৷ তাঁকে হেফাজতে নিয়ে গরু পাচার মামলার একেবারে শিকড়ে পৌঁছতে চাইছে সিবিআই৷
অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা জানতে চাইছেন গরু পাচারের রোড ম্যাপ৷ ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর হাতে গরু পাচার সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য এসেছে৷ যে চোরা পথে গরু পাচার হত, তার হদিশ পেয়েছেন সিবিআই অফিসাররা৷ এই চোরা জাল বিস্তৃত ছিল গোটা দেশে৷
সিবিআই সূত্রে খবর, গরু পাচার মামলার মূল পাণ্ডা এলামুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানা গিয়েছে, উত্তর ও পশ্চিম ভারতের পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান থেকে গরু আসত বীরভূমে।
মূলত যাদের সন্তান প্রজনন ক্ষমতা নেই, বয়স হয়ে যাওয়া বলদই ছিল পাচারকারীদের প্রথম পছন্দ। ভিন রাজ্য থেকে গরু এসে জমা হত পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ইলামবাজারে৷ যেখানে চলত ‘অনুব্রত রাজ’৷ এই ইলামবাজারেই বসে বিরাট গরুর হাট।
এনামুল ও গরু পাচার মামলার বাকি অভিযুক্তদের জেরা করে সিবিআই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ইলামবাজারে গরুর হাটের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যক্তির হাতে। বর্তমানে তিনি ফেরার৷ কিন্তু, কী ভাবে অনুব্রত গড় থেকে পাচার হত গরু? সিবিআই সূত্রে খবর, ইলামবাজার থেকে ট্রাকে তোলা হত গরু।
এর পর বীরভূমের ফুটিসাঁকো বা বাদশাহি রোড ধরে সোজা মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে পৌঁছত সেই ট্রাক। সেখানে বিভিন্ন খাটালে রাখা হত গরুগুলিকে৷ তারপর অপেক্ষা করা হত পাচারকাণ্ডে জড়িত বিএসএফ এবং কাস্টমসের সবুজ সঙ্কেতের জন্য।
তদন্তে নেমে সিবিআই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই গোটা চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল কাস্টমস ও বিএসএফের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ৷ এনামুল হকের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশ ছিল তাঁদের।
পাচারের পরিভাষায় ‘লাইন খোলা’ হত তাঁদের সাহায্যেই। নির্দিষ্ট দিনে এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টার জন্য সীমান্তের চোরা পথ কার্যত ‘ওপেন’ করে দেওয়া হত৷ সেই পথ ধরেই গরু নিয়ে যেত স্থানীয় যুবকরা। বাংলাদেশ থেকেও আসত পাচারকারীর দল।
শুধুমাত্র স্থলপথে সীমান্তের চোরা পথ পেরিয়েই এই ব্যবসা চলত না৷ জল সীমান্ত ধরেও পারাপার করা হত গরু। নির্বিঘ্নে পাচারর কাজ সারতে একটা সুনির্দিষ্ট চ্যানেল কাজ করত।
ভিন রাজ্য থেকে গরু আনা থেকে শুরু করে যখন যে থানার উপর দিয়ে গরুর ট্রাক যেত, সেখানকার থানার কর্তা এবং স্থানীয় নেতারা একটা মোটা অঙ্কের ঘুষ নিতেন। সিবিআই জানতে পেরেছে, এই টাকার একটা অংশ জেলার প্রভাবশালী এক নেতার কাছেও পৌঁছত।
এনামুল হককে জেরা করে জানা গিয়েছে, গোটা প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবে চালাতে বিএসএফ কর্তাদের একাংশও মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন। একাধিক কমান্ডান্ট পর্যায়ের আধিকারিক, ডিআইজি বা আইজি স্তরের একাধিক আধিকারিক গরু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরাও আর্থিকভাবে ফায়দা লুটেছে। সেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীন তদন্ত শুরু করেছে বিএসএফ।
ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন দু’জন বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমার এবং জেডি ম্যাথু। এই সিন্ডিকেটের জাল বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে বলেই তদন্তে উঠে আসে। সিবিআই-এর গোয়েন্দারা এও জানতে পেরেছেন, যে দামে গরু কেনা হত, তার থেকে আট থেকে দশ গুণ দামে বাংলাদেশে পাচার করা হত৷