করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় খুলে দেওয়া হয়েছিল চারধাম। মাত্র বারোদিন আগে, অর্থাৎ গত সপ্তাহের সোমবার করোনার দাপটে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে বহু প্রত্যাশিত চারধাম যাত্রা। দেশের অন্যান্য তীর্থস্থানগুলোর থেকে অনেকটাই জনপ্রিয় এবং প্রত্যাশিত তীর্থস্থান হল এই চারধাম। প্রতিবছরই কয়েক লক্ষ মানুষ ভিড় জমান উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী, এবং যমুনোত্রীতে। এই বছরও যাত্রা শুরুর দিন থেকেই হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ভিড় জমিয়েছে এই তীর্থস্থানগুলিতে। কিন্তু চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তরাখান্ড স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট। ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে চারধাম যাত্রা শুরু হওয়ার মাত্র বারোদিনের মধ্যেই অন্তত ২০ জন ভক্ত প্রাণ হারিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে এই তীর্থযাত্রায় এত বেশি মৃত্যুহার আগে কখনও দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন যমুনোত্রী এবং গঙ্গোত্রী দর্শনের মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন হয়েছিল এই চারধাম যাত্রার। এরপর যাত্রা শুরুর প্রায় দুই দিন পরে ৬ মে ভোরে খোলে কেদারনাথের দরজা এবং ৮ মে থেকে বদ্রিনাথ যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু জানা যাচ্ছে, গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী ধাম খোলার ৬ দিনের মধ্যে সোমবার অর্থাৎ ৯ মে পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১৪ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে কেদারনাথ উদ্বোধনের পরে মাত্র চার দিনে পাঁচজন তীর্থযাত্রী মারা গিয়েছেন। বদ্রিনাথ তীর্থযাত্রা খোলার পরেও একজন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। অধিকাংশ ভক্তরই মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগের সমস্যার কারণে। অনেকে আবার উচ্চতাজনিত অসুস্থতার কারণেও প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হল চলতি বছরে যাত্রা শুরুর আগেই উত্তরায়ন সরকারের পক্ষ থেকে তীর্থযাত্রীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এক্ষেত্রে তীর্থযাত্রার বিভিন্ন পয়েন্টে উত্তরাখণ্ড সরকার হেলথকেয়ার সেন্টার চালু করে। কিন্তু তারপরেও এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুহার কার্যত চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসক মহলের। সরকারি হেলথ কেয়ারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডক্টর প্রদীপ ভরদ্বাজ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এই মৃত্যু হার বাড়ার প্রধান কারণ হল উচ্চতা। তাঁর কথায়, ‘তীর্থ যাত্রীদের অধিকাংশই কম উচ্চতা থেকে সরাসরি ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার ফুটের উচ্চতায় অবস্থিত এই তীর্থক্ষেত্রগুলিতে আসছেন। এক্ষেত্রে এমন আকস্মিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং পরে তাঁদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু ঘটছে।’ এছাড়াও তিনি বলেন, ‘যাত্রা শুরুর আগে তীর্থযাত্রীদের কোনও মেডিকেল চেকআপ করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র করোনার রিপোর্ট সাথে থাকলেই তীর্থযাত্রীদের এই চারধাম যাত্রা পারমিট দেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত কারণের জন্যই বাড়ছে মৃত্যুহার।’
তিনি আরও বলেন, ‘তীর্থযাত্রীদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে যারা এত উচ্চতায় যাত্রা করার জন্য উপযুক্ত তাদেরকেই এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত। আমরা তীর্থযাত্রীদের সমস্ত রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা দিতে প্রস্তুত। আমাদের সঙ্গে এমন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হয়েছেন যারা এটা করতে পারেন।’ অন্যদিকে এই চারধাম যাত্রা প্রসঙ্গে উত্তরকাশীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত দু’বছর করোনার কারণে এই তীর্থ বন্ধ থাকায় এবার অন্যবারের থেকে অনেক বেশি যাত্রী এই তীর্থস্থানগুলিতে ভিড় জমিয়েছেন। সরকার করোনার বিধিনিষেধের কথা মাথায় রেখে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা বেঁধে দেওয়ার পরে পুরোহিতরা এই বিষয়ে বিরোধিতা করেন। ফলে এই মুহূর্তে কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই এই তীর্থযাত্রা হচ্ছে। একইভাবে মন্দির সংলগ্ন হোটেল এবং ধর্মশালাগুলিতেও যাত্রীদের ভিড় এড়াতে কোনও সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। সব মিলিয়েই ভিড় নিয়ন্ত্রণের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রশাসনকে।