তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্যের মসনদে বসার পর সাধারণ মানুষের জন্য বহু প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। সেই সময় যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল রাজ্যবাসীর প্রত্যেককে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় আনা।
অর্থাৎ রাজ্যের প্রত্যেক পরিবার এই কার্ডের মাধ্যমে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেও বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাতে পারবেন। এরপর তৃণমূল এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। কিন্তু দেখা যায় যা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে বাস্তবের প্রচুর ফারাক রয়েছে।
কারণ অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হোল্ডারদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। যা নিয়ে এখনও চাপানউতোর চলছে। কিন্তু সমস্যা মেটানো যায়নি। সেই সমস্ত সমস্যা মেটাতে এবার পরামর্শদাতা হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারকে নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার।
দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বহু অভিযোগ এসেছে। যার জন্য সমস্যায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এক শ্রেণির সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের রেফার করছেন।
কারণ স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সাহায্যে সেই সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা করালে সেখান থেকে তাঁরা বাড়তি উপার্জন করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পেয়েছে রাজ্য।
এরপরই নড়েচড়ে বসে নবান্ন। রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছেন শুধু জরিমানা নয়, এবার কড়া পদক্ষেপ করা হবে দোষীদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে বিশেষ পরামর্শদাতা নিয়োগ করছে রাজ্য। সূত্রের খবর অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার সুতীর্থ ভট্টাচার্যকে ওই পদে বসানো হচ্ছে। এদিকে বহু বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
বারবার বলা সত্ত্বেও সেই হাসপাতালগুলি রাজ্য সরকারের কথায় কর্ণপাত করছে না। তাই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা যাতে রাজ্যবাসী সুন্দরভাবে পায় সেই লক্ষ্যেই পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে চলেছে নবান্ন।
কিন্তু স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আওতায় চিকিৎসা করালে বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোন রোগে কত টাকা নিতে পারবে সেই বিষয়টি নিয়ে জট জটিলতা অব্যাহত। তাদের বক্তব্য রাজ্য সরকার যে দর বেঁধে দিয়েছে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে, তাতে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
হাসপাতালগুলি এই বিষয়ে বারবার আবেদন করলেও রাজ্য সরকার তাদের চাহিদা মতো টাকা বাড়ায়নি। মূলত সেই কারণেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে নামী হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করাতে গেলে রোগীদের প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ উঠছে।
শুধু এটাই নয়, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কাছে তাদের যা পাওনা হয়েছে তার বড় অংশ বাকি পড়ে রয়েছে। সেই বিপুল পরিমাণ টাকা কবে পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে যে পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে চলেছে তাতে আদৌ সমস্যা কতটা মিটবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।