শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ প্রকাশ্যে এসেছে একের পর এক তথ্য৷ কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি৷ কালো টাকা সাদা করতে একের পর এক সংস্থায় বিনিয়োগ, একাধিক ফ্ল্যাট-বাড়ি, নামে-বেনামে গুচ্ছ সম্পত্তি৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে বিপুল সম্পত্তি দেখে চোখ কপালে সিবিআই আধিকারিকদের৷
এই চক্রব্যূহ যে বেশ গভীর তা স্পষ্ট৷ প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দুটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হতেই তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, শিকড় বহু দূর বিস্তৃত৷
এই দুর্নীতি মামলায় পরতে পরতে রয়েছে রহস্য৷ বেআইনি নিয়োগের এই বিপুল টাকা কোথায় কোখায় যেত, কাদের মাধ্যমে লেনদেন হত, তা জানতে উঠেপড়ে লেগেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ এই মামলায় শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় প্রসন্ন নামে আরও এক ব্যক্তিকে৷ উঠে আসে আরও নতুন তথ্য৷
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর একটি সংস্থা রয়েছে প্রসন্নর। তাঁর দফতরে বসেই চলত লেনদেন সংক্রান্ত রফা৷ তবে শুধুই কি তাই? নাকি প্রসন্নর সঙ্গে দুর্নীতির যোগ আরও গভীরে? তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
সল্টলেকে তাঁর দফতরে গিয়ে প্রসন্নকে গ্রেফতার করে সিবিআই। যিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচত ছিলেন৷ তবে এটুকু পরিচয় তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়৷ কারণ তিনি সম্পর্কে পার্থের ভাগ্নি-জামাই৷
তদন্তে নেমে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, প্রসন্নর গাড়ি ভাড়া দেওয়া সংস্থার অফিসের বসেই চলত বেআইনি নিয়োগের লেনদেন। মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে যে সব চাকরি প্রার্থীদের অবৈধ নিয়োগ করা হয়েছে, সেই সব প্রার্থীদের থেকে টাকা নেওয়ার কাজ চলত প্রসন্নর অফিসে বসে৷
রাত ১০ টা বা ১১ টার পর কালো কাঁচ তোলা গাড়ি এসে দাঁড়াত প্রসন্নর অফিসের বাইরে। ওই গাড়ি করেই নাকি টাকা এসে পৌঁছত সল্টলেক জিডি ২৫৩-র ওই অফিসে৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রসন্নর ওই সংস্থার বাইরে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অসফল চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত এজেন্ট ছিল৷ তাঁদের মধ্যেই অন্যতম ছিলেন প্রদীপ সিং। প্রদীপকে জেরা করেই উঠে আসে প্রসন্নর নাম৷
জানা গিয়েছে এক সময় সামান্য রং মিস্ত্রির কাজ করতেন পার্থের এই ভাগ্নি-জামাই৷ পরে রং-এর ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন৷ সেখান থেকে রাজকীয় উত্থান৷ সল্টলেক ও নিউ টাউন এলাকায় একাধিক সম্পত্তির মালিক প্রসন্ন৷ নিউটাউনের বলাকা আবাসনে দুটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় একটি অভিজাত ভিলা রয়েছে তাঁর।
প্রাসাদোপম সেই ভিলার সামনে রয়েছে চোখ ধাঁধানো বাগান। এখানেই শেষ নয়৷ রাজারহাটের ধারসাইতেও তাঁর আরও একটি বাগান বাড়ির হদিশ পেয়েছেন সিবিআই-এর তদন্তাকীর অফিসাররা৷ এ ছাড়াও একাধিক জমির খোঁজও মিলেছে৷ প্রসন্নর সম্পত্তির তালিকা আরও দীর্ঘ৷ দিঘা, জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গে রিসর্ট রয়েছে তাঁর। বেশ কয়েকটি চা বাগানেরও মালিক পার্থের এই ভাগ্নি-জামাই। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকার সঙ্গে এই বিপুল সম্পত্তির কতটা যোগ রয়েছে, তা খুঁজে বার করতে তৎপর সিবিআই৷