বাড়ির চারপাশে থইথই করছে পুনর্ভবা নদীর জল।স্রোতের শব্দে বুক কেঁপে উঠছে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা আশুবালা সরকারের।আশুবালা দেবী বলেন বাড়িতে সাড়ে আটমাসের অন্তঃসত্বা মেয়ে রয়েছে পুনর্ভবা নদীর জলের স্রোতে রাস্তা ভেঙে বাড়ি এখন জলাভুমি। যোগাযোগের মাধ্যম বলতে একমাত্র ছোট ডিঙি নৌকা।স্রোতের কারণে ডিঙি নৌকায় যাতায়াত ঝুঁকির হয়ে উঠেছে।অন্তঃসত্বা মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনতে হচ্ছে।
তাঁর মতোই অন্তঃসত্বা মেয়ে ও বউমাকে নিয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন পুনর্ভবা নদীর জলে প্লাবিত বামনগোলা ব্লকের খুটাদহ, বটতলির আটটি পরিবার।আশাকর্মী প্রমিলা বিশ্বাস বলেন বটতলি, খুটাদহ গ্রামের আটজন মহিলা অন্তঃসত্বা রয়েছে।তাঁদের আচমকা প্রসব যন্ত্রণ হলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছানো যাবে না।প্রসুতি মেয়েদের নিয়ে আমাদেরও রাতের ঘুম উড়েছে।চারদিন ধরে রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বামনগোলা ব্লকের জগদল্লা, গোবিন্দপুর-মহেশপুর, চাঁদপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রায় ১৫টি গ্রাম। গ্রামের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরানো তো দূরের কথা, ত্রিপল এবং শুকনো খাবারটুকুও পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।অভিযোগ গ্রামে পৌঁছয়নি ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও,ফলে, প্রশাসনের ভুমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জলবন্দি প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
শুক্রবার, গ্রামগুলিতে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যান বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির নারী, শিশু ও ত্রাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ রাজিতা কিস্কু। তাঁকে কাছে পেয়ে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা।রাজিতা বলেন ১০০টি ত্রিপল কিছু শুকনো খাবার নিয়ে গ্রামগুলিতে পৌঁছেছি ,যা পর্যাপ্ত নয়।ব্লক প্রশাসনকে পুরো ঘটনার রিপোর্ট দেব।বামনগোলা ব্লকের বিডিও রাজু কুণ্ডু বলেন পঞ্চায়েতগুলিতে ত্রাণ পৌঁছানোর হয়েছে এবং পঞ্চায়েতগুলোতে ত্রাণ শিবির খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তবে গ্রামবাসীদের দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রামবাসীদের দাবি, খুটাদহ, বটতলি, আদাডাঙা, সোনঘাট, তালভিটা, তালতলা, রাঙামাটি, হরিপাল পাড়া, সোনঘাটের মতো জলবন্দি গ্রামগুলিতে পৌঁছানোর সীমান্ত রোড, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ছিল।গত রবিবার রাস্তা দুটির প্রায় বেসিরভাগ জাইগায় ফাটল ধরেছে।জলের তলায় রয়েছে খুটাদহ হাই স্কুল, বটলতি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুটাদহ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।সীমান্তের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতের সমস্যায় পড়েছে বিএসএফ।জলের তোড়ে রাস্তার মতো প্রচুর বাড়ি ভেঙেছে।তলিয়ে গিয়েছে প্রায় দুশো বিঘা ধানের জমিও।গ্রামবাসী ঝর্ণা রায় বলেন সদরে পৌঁছানোর জন্য আমাদের কাছে নদী ছাড়া কোনও রাস্তায় নেই।তবুও আমাদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে না।বাড়ির মতো আমরাও জলে ভেসে গেলে কী ঘুম ভাঙবে প্রশাসনের বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।