নিষ্ক্রিয় রেশন কার্ড নিয়ে কোনো সাড়া নেই রাজ্য সরকারের তরফে

এইমুহুর্তে বেশ চাপের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ একদিকে শিক্ষা নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে দুই মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে৷ শিক্ষা নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল৷ অন্যদিকে কিন্তু, রেশন কার্ড নিয়ে কোনও দলের মধ্যেই কোনও দ্বন্দ্ব নেই৷ নেই পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ৷ অথচ পরিসংখ্যান বলছে গত আট মাসে রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ১৪ লক্ষ মানুষের রেশন কার্ড ‘ডিঅ্যাকটিভ’ হয়ে গিয়েছে৷ একবার রেশন কার্ড ডিঅ্যাকটিভ হলে তাতে আর রেশন মেলে না৷ তবে কি বাতিল হয়ে গেল এই সকল রেশন কার্ডগুলি? নিশ্চুপ সরকার৷ 

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের তরফে কোনও জবাব মেলেনি৷ অথচ সরকারি তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত রাজ্যের ১ কোটি ১৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৭৫৫ জন আনুষ্ঠানিকভাবে রেশনের আওতার বাইরে চলে গিয়েছেন। তাঁদের সকলেরই কার্ড ‘নিষ্ক্রীয়’৷ কেন ডিঅ্যাক্টিভ হল এই কার্ডগুলি? এ প্রসঙ্গে রাজ্যের খাদ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন,‘‘এর পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে৷ পরে জানানো হবে।’’ পরে অবশ্য আর কিছু জানানো হয়নি।

রাজ্যের খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, এই বিপুল পরিমাণ কার্ড নিষ্ক্রীয় হওয়ার পিছনে মূলত রয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি৷ এই সিস্টেম চালু হওয়ায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক রেশন কার্ড  রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না৷ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই চালু হয় ডিজিটাল কার্ড৷ ডিজিটাল কার্ডের গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটি পেরিয়ে যায়। ২০২০-র মাঝামাঝি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দ্বিতীয় দফার শাসনে রাজ্যে চালু করা হয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। যদিও এই ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে রাজ্যে সরকারি পর্যায়ে অনেক গড়িমসি চলেছে৷ আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ড সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ৩ বার পেরিয়েছে৷ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর পরেই কার্ডের সংখ্যা এক লাফে অনেকটা কমে যায়৷ ২০১৩-র পরে যে সংখ্যাটা আচমকা বেড়ে গিয়েছিল৷ 

খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘ সমস্যা একটা রয়েছে৷ এমন অনেক কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেটেড হচ্ছে, যাঁরা সত্যিকারের রেশনের গ্রাহক। ই-পজ পদ্ধতিতে মেশিনে হাতের আঙুল  ছুঁইয়ে রেশন নিতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকের ক্ষেত্রেই আঙুলের ছাপ মিলছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেই গ্রাহকদের।’’

‘জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেশন ডিলারস’-এর অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিম হোসেন হালদারের কথায়, ‘‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার ই-পজ মেশিনে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে রেশন দিচ্ছে৷ আঙুলের ছাপ না মিললেই গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে একটি ওটিপি আসে। সেই ওটিপি, আধার কার্ডের নম্বর বসিয়ে অনেক ডিলারই রেশন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সব সময় তাও করা যাচ্ছে না৷ তাই কার্ড ব্লক হয়ে যাচ্ছে বা ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যাচ্ছে।’’ 

রেশন ডিলার সংগঠনের সভাপতি, রতন সাউ বলেন,‘‘প্রতিদিনই আমাদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ এই অবস্থায় কী করা যায়, তা স্থির করতেই আগামী ১ জুন আমরা আলোচনায় বসতে চলেছি। আমাদের সরাসরি গ্রাহকদের মুখোমুখি হতে হয়। রেশন না পেলে ক্ষোভ এসে পড়ে আমাদের উপরেই৷’’  গত আট মাসে ‘সক্রিয়তা হারানো’ কার্ডের সংখ্যা হল ১কোটি ১৪ হাজারের কাছি। জানেন এর ফলে রেশনের সুবিধা থেকে বাদ পড়েছেন কত পরিবার? সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সংখ্যাটা ৫৮ লক্ষের বেশি। যার একাংশ প্রকৃত গ্রাহক।