পৃথিবী ছাড়া সত্যি কি আরো কোথাও প্রাণের সঞ্চার আছে? পৃথিবীর বাইরেও কি লুকিয়ে রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব? এই প্রশ্ন চিরন্তন৷ যার উত্তর পেতে নিরন্তর খোঁজ চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ সৌরমণ্ডলে আমরা যে একা নই, সেই সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়ে উঠল বৃহস্পতির চাঁদ ‘ইউরোপা’-য়।
সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, নীল গ্রহের বুকে মহাসাগরগুলিতে যতটা জল রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে বৃহস্পতির অনেকগুলি চাঁদের মধ্যে একটিতে৷ যার নাম ইউরোপা৷ তরল জলের সেই মহাসাগরগুলি লুকিয়ে রয়েছে ইউরোপার পুরু বরফে মোড়া পিঠের নীচে। শুধু তরল জলই নয়, প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য যে রাসায়নিক উপাদানগুলি প্রয়োজন, সেগুলিও রয়েছে ইউরোপার অতলান্ত মহাসাগরে।
এমনকি, প্রাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেনও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ইউরোপার বরফে ঢাকা পিঠে৷ যাকে পৃষ্ঠদেশ থেকে নীচে টেনে নিয়ে গিয়ে তরল জলের মহাসাগরে মেশাচ্ছে ইউরোপাই। এই প্রক্রিয়া চলছে এক অভিনব কৌশলে। যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে ইউরোপার পুরু বরফে মোড়া পিঠের উপরে জমা অক্সিজেনের ৮৬ শতাংশই পৌঁছে যাচ্ছে বরফের চাদরের নীচে থাকে অগাধ জলের মহাসাগরগুলিতে। বৃহস্পতির এই চাঁদে প্রাণের হদিশ খুঁজতে আগামী দুই বছরের মধ্যেই ইউরোপার কক্ষপথে পাড়ি দেবে নাসার মহাকাশযান ‘ইউরোপা ক্লিপার’।
ইউরোপায় প্রাণের সন্ধান চালাচ্ছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্ক হেসির নেতৃত্বাধীন একটি টিম৷ গবেষণায় জানা গিয়েছে, চাঁদ আর পৃথীর মতোই রসায়ন রয়েছে বৃহস্পতি ও ইউরোপার৷ চাঁদের টানে যেমন পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয় তেমনই আকারে অত্যন্ত বড় ও ভারী গ্রহ বৃহস্পতির জোরালো অভিকর্ষ বলের টানই ইউরোপায় প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার শক্তি জোগায়। সেই টানই পুরু বরফে আস্তরণে ঢাকা পৃষ্টদেশের নীচে থাকা ইউরোপার অন্দরকে উষ্ণ থাকতে সাহায্য করে। ঠিক সেই কারণেই পুরু বরফে স্তরের নীচে থাকা সত্ত্বেও ইউরোপার মহাসাগরগুলির জল জমে বরফে পরিণত হয় না। তা থাকে তরল অবস্থাতেই৷
শুধু তা-ই নয়, ইউরোপার পুরু বরফে মোড়া পিঠের উপর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন। যা প্রাণের সম্ভাবনাকে আরও জোরাল করেছে৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল কী ভাবে সৃষ্টি হয় এই অক্সিজেন? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যালোক আর বৃহস্পতি থেকে ছিটকে আসা আধানযুক্ত কণা ইউরোপার পিঠে আছড়ে পড়ার ফলেই সেখানে অক্সিজেন সৃষ্টি হয়।