বাংলায় ধারা জারি নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের দুই মত

এই মুহূর্তে রাজ্যে একের পর এক হত্যা ও ধর্ষণ কাণ্ডে নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতি৷ রামপুরহাট গণহত্যার ঘটনায় শিহরিত গোটা বাংলা৷ এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের মতো এ রাজ্যেও ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি তুলেছে গেরুয়া শিবির৷ অন্যদিকে, কংগ্রেসের দাবি বাংলায় ৩৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করা হোক৷ এমনকী রাজ্যে ৩৫৫ ধারা কার্যকর করার দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী৷ 

যে কোনও রাজ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হলেই রাজনীতিবিদদের মুখে সংবিধানের ৩৫৬ অথবা ৩৫৫ অনুচ্ছেদ জারি করার দাবি শোনা যায়৷ অতীতে বাম আমলে এমন দাবি শোনা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও৷ এখন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেই ৩৫৫ প্রয়োগের দাবি৷ বিরোধীরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ ধারা জারি করা না গেলে নিদেনপক্ষে ৩৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করা হোক৷ তাতে শায়েস্তা হবে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু প্রশ্ন হল ৩৫৫ এবং ৩৫৬ অনুচ্ছেদের মধ্যে পার্থক্য কী?

কোনও রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে ৩৫৬ ধারা বলে জরুরি অবস্থা জারি করা যেতে পারে৷  যাকে সাধারণ ভাবে আমরা রাষ্ট্রপতি শাসন বলে থাকি৷  কিন্তু, ৩৫৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক রাজ্যকে বাইরের আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা অশান্তি থেকে রক্ষা করা এবং রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সংবিধান অনুসারে চালিত হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্য৷ ৩৫৫ অনুচ্ছেদ বলছে, বাইরের আক্রমণ বা অভ্যন্ত্ররীণ গোলোযোগ থেকে রাজ্য সরকারগুলিকে রক্ষা করার পাশপাশি  সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য চালাতে রাজ্য সরকারের যা যা সাহায্য প্রয়োজন, কেন্দ্র তাও দিতে দায়বদ্ধ৷ 

অর্থাৎ দেখতে গেলে, ৩৫৬ ধারা হল কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র৷ যা প্রয়োগ করে যে কোনও রাজ্য সরকারকে ফেলে দেওয়া যায়৷ আর ৩৫৫ অনুচ্ছেদ হল ঢাল, যা রাজ্য সরকারকে অরাজক পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ ও বাইকরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে৷

রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বা ৩৫৬ ধারা জারি হয় কীভাবে? যদি কোনও দল রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় এবং বিধানসভা সেই দলের নেতা অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করতে না পারে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে৷ এছাড়াও বিধানসভায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারলে কিংবা অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারের পতন হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়৷ আইন শৃঙ্ঘলার কারণেও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যেতে পারে৷ ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে, জম্মু ও কাশ্মীরে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের জেরে সেখানে টানা ৬ বছর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছিল। তাছাড়া ১৯৭৩ সালে পুলিশ বিদ্রোহের পর ৫ মাস এবং ১৯৯২ সালে বাবরি ধ্বংসের পরে ১ বছরের জন্য উত্তর প্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন কার্যকর ছিল।