এই নিয়ে তৃতীয়বার, পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। একুশের সেই হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নাস্তানাবুদ হয়েছে তৃণমূলের কাছে। সেই সাফল্যে উৎসাহী হয়ে তৃণমূল একাধিক রাজ্যে পা রাখে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়, হরিয়ানা, অসম প্রভৃতি রাজ্যে তৃণমূল নিজেদের শক্তি বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠে। ওই রাজ্যগুলিতে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়ে তৃণমূল পা রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে তৃণমূল রাজ্যগুলিতে তেমন সুবিধা করতে পারছে না। তবে কি তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক দলই রয়ে যাবে, এই প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠছে।
আসলে ওই রাজ্যগুলির একাধিক তৃণমূল নেতা সাম্প্রতিককালে দল ছেড়েছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অশোক তানওয়ার একটা সময় রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। তাঁকে হরিয়ানার প্রদেশ সভাপতি করে কংগ্রেস। কিন্তু কয়েক মাস আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন অশোক। হরিয়ানায় তৃণমূলের প্রধান করা হয় তাঁকে। রীতিমতো ঘটা করে দলীয় কার্যালয় খোলা হয় সেখানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু তৃণমূলে যোগদানের মাসখানেকের মধ্যেই আম আদমি পার্টিতে যোগদান করেছেন অশোক তানওয়ার। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে গোয়াতে। সৈকত রাজ্যটিতে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। এরপরই তৃণমূল ছাড়েন বেশ কয়েকজন নেতানেত্রী।
একই ভাবে তৃণমূল ধাক্কা খেয়েছে ত্রিপুরায়। বিজেপি ছেড়ে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে মাথা মুড়িয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন আশিস দাস। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তৃণমূল ত্যাগ করলেন প্রাক্তন বিধায়ক আশিস দাস। উল্লেখ্য আগরতলা থেকে কালীঘাটে এসে মাথা মুড়িয়েছিলেন তিনি। তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস বলেছিলেন পাপবোধ থেকেই এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। রীতিমতো মাথা মুড়িয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন তিনি। তারপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। ত্রিপুরায় তিনি যথেষ্ট ওজনদার নেতা বলেই পরিচিত। কিন্তু তার কয়েক মাস পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ছেড়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে দাবি করেছেন ত্রিপুরায় তৃণমূল কোনও দিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর ত্রিপুরার পাশাপাশি তৃণমূল ভাঙতে চলেছে মেঘালয়েও। উল্লেখ্য মুকুল সাংমা-সহ কংগ্রেসের বারো জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। রাতারাতি মেঘালয়ে তৃণমূল প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। কিন্তু সূত্রের খবর তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন অন্ততপক্ষে পাঁচ বিধায়ক। শিটলাং পেল, জিমি ডি সাংমা, হিমালয় সাংলিং, মার্থন সংমা এবং জর্জ বি লিনদো তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন বলে খবর। তাঁরা ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগদান করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই দলের ভাঙন রুখতে সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অর্থাৎ এটা স্পষ্ট ওই রাজ্যগুলিতে খুব একটা স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। উল্লেখ্য অধিকাংশ রাজ্যে কংগ্রেস ভাঙিয়ে বিধায়ক বা নেতা-নেত্রীদের দলে নিয়েছে তৃণমূল। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কারণে তাঁদের অনেকেই তৃণমূলে মানিয়ে নিতে পারছেন না। অনেকে গুরুত্ব কম পাওয়ার অভিযোগ তুলে দল ছাড়ছেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছেন। যেখানে রাজ্যগুলিতে তৃণমূল ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে সেখানে এই ছবি যে তাদের পক্ষে একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়, তা স্পষ্ট।