ক্ষমতা দখলের পর তালিবানি শাসন চলছে আফগানিস্তানে। এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে একের পর এক নিয়ম লাঘু হচ্ছে তালিবানদের তরফে। এতদিন পর্যন্ত বাইরে বেরোতে, এমনকি বাড়ির ভিতরেও কোনও পুরুষের সামনে বাধ্যতামূলক ছিল হিজাব। কিন্তু এবার সেই হিসাবেও কাজ হচ্ছে না। হিজাব পরার পরেও মহিলাদের শরীরের কোনও কোনও অংশ দৃশ্যমান হচ্ছে প্রকাশ্য রাস্তায়, যা একেবারেই নাপছন্দ তালিবানদের। আর তাই এবার আফগান মহিলাদের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল সবকিছু ঢাকতে জারি করা হল নয়া ফতোয়া। সম্প্রতি তালিবান সরকারের তরফ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে এরপর থেকে আফগান মহিলাদের রাস্তায় বের হতে হলে পড়তে হবে চাদরি। উল্লেখ্য, এই চাদরিও এক ধরনের বোরখা। তবে এই বোরখায় মাথা থেকে পা পুরোটাই ঢাকা থাকে। ফলে মহিলাদের শরীরের কোন অংশই আর বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়।
এর সঙ্গে আরও জানা যাচ্ছে সম্প্রতি তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা তালিবানের সাধারন বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছে, বাড়ির বাইরে বের হতে গেলে যেমন চাদরি পড়তে হবে, তেমনি বাড়ির ভিতরে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনে সর্বদা হিজাব পরে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে চোখ ছাড়া মুখ এবং শরীরের আর কোনও অংশই যেন দৃশ্যমান না হয়। তবে এই সমস্ত নিয়মনীতি থেকে আপাতত আফগানিস্তানের বয়স্ক মহিলা এবং শিশুকন্যাদের রেহাই দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আখুন্দজাদা আরও জানিয়েছেন প্রয়োজন ছাড়া মহিলাদের বাড়ি থেকে বেশি বেরোনোর দরকারই নেই।
উল্লেখ্য ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবান আফগানিস্তানের ওপর প্রথমবারের জন্য যখন শাসন কায়েম করেছিল তখনও এই ভাবেই মহিলাদের সর্বদা দমিয়ে রাখা হত। কর্মক্ষেত্র থেকে শিক্ষাক্ষেত্র সর্বদিক থেকে বঞ্চিত ছিল আফগান মহিলারা। তবে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের জন্য যখন আফগানিস্তান পুনরায় তালিবানদের দখলে যায় তখন তালিবান দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছিলেন আগের বারের মত এবার আর শক্তির অপব্যবহার হবে না। এমনকি মহিলাদের স্বাধীনতা এবং শিক্ষা নিয়েও সেই সময় একাধিক ইতিবাচক বার্তা দিতে দেখা গিয়েছিল তালিবানদের। কিন্তু সেসমস্ত শুধুমাত্র মুখের কথা ছিল তা অল্পদিনের মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে।
তালিবানি শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তানের মহিলারা একের পর এক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রথমে শিক্ষা পরে কর্মসংস্থান, এমনকি প্রকাশ্য রাস্তায় বেরোনোর ক্ষেত্রেও একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে মেয়েদের উপর। এছাড়াও পোশাক নিয়ে ফতোয়া, আচার-আচরণে একাধিক বিধিনিষেধ তো আছেই। সব মিলিয়ে তালিবান যে স্বমহিমায় তার নিজের জায়গাতেই বিদ্যমান আছে তারই প্রমাণ মিলছে বারবার।