রাজ্যের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে শিলিগুড়ি থেকে পথ চলা শুরু হয়েছিল দার্জিলিং মেলের

ঐতিহ্য ফেরাতে বা জেলার নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৪৬ বছরের পুরোনো ট্রেনটিকে শিলিগুড়ি জংশন থেকে চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হতেই এই প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দার্জিলিং  জেলা তো বটেই, জলপাইগুড়নজেলার একাংশ বাসিন্দা বেজায় খুশি হবেন। তবে ‘পড়ে পাওয়া দার্জিলিং মেল’ হাতছাড়া হলে হতাশ হতে পারে হলদিবাড়ি সহ সংলগ্ন এলাকা। উসকে উঠতে পারে নতুন বিতর্কও। তবে, আপাতত রেলের এই সিদ্ধান্ত ‘ঠান্ডা ঘরে’। মূলত নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে ঠাকুরগঞ্জ বা বাগডোগরা রুটে ডাবল লাইন না থাকার জন্যই দার্জিলিং মেল আপাতত ফিরছে না শিলিগুড়ি জংশনে। যেমন আটকে রয়েছে চিকেন নেকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একাধিক রেলপ্রকল্প। উচ্ছেদ-জটেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখছে না বলে রেলকর্তাদের বক্তব্য। এই ক্ষেত্রে যথারীতি অভিযোগের আঙুল উঠছে রাজ্য প্রশাসনের দিকে।

উত্তর ও দক্ষিণ, রাজ্যের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে ১৮৭৮ সালের ১ জানুয়ারি শিলিগুড়ি থেকে পথ চলা শুরু হয়েছিল দার্জিলিং মেলের। ফের ট্রেনটিকে শিলিগুড়িতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই। তবে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের পরিবর্তে শিলিগুড়ি জংশন থেকে ট্রেনটিকে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এই প্রস্তাবে রেল বোর্ডও সায় দিয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না শিলিগুড়ি জংশন থেকে ঠাকুরগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৬৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন না থাকার জন্য। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক বলছেন, ‘রেলপ্রকল্পের ক্ষেত্রে বর্তমানে অর্থ আর বাধা হয়ে উঠছে না। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি। বাগডোগরা রুটে রেলের নিজস্ব জমি থাকলেও ডাবল লাইনের কাজ আটকে রয়েছে জমি জবরদখল হয়ে যাওয়ায়।’ সম্প্রতি একই ধরনের অভিযোগ শোনা গিয়েছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর মুখে। জমিজটের কারণে রাজ্যে একাধিক প্রকল্প আটকে রয়েছে বলে রেলমন্ত্রীর অভিযোগ।

এই সূত্র ধরেই ডাবল লাইন প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ বলছেন, ‘রেলের সম্প্রসারণ অত্যন্ত প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক হওয়া উচিত। কেন না, রেলপ্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী হয়। কিন্তু বিজেপি বিরোধিতা করতে গিয়ে তৃণমূল সরকার মানুষের কল্যাণে নজর দিচ্ছে না।’ যদিও বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রসঙ্গ টেনে এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র ও তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা গৌতম দেব। তাঁর বক্তব্য, ‘বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে প্রথমে বিনামূল্যে ২৮ একর জমি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ১১৬ একর দেওয়া হয়েছে সরকারি দরে। ফলে রাজ্য সরকার উন্নয়নের পক্ষে নয়, এধরনের অভিযোগ ঠিক নয়। তাছাড়া যে কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রেই সরকারের সঙ্গে সরকারের কথা হয়।’