আগামী লোকসভা নির্বাচনই এখন প্রধান লক্ষ্য। জোরকদমে চলছে তার পরিকল্পনা। চব্বিশে বাংলা থেকে বিজেপির পঁচিশ সাংসদ! এমন দাবিই করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
উল্লেখ্য আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদে শুরু হয়েছে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন দুপুরে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তার আগে সকাল থেকেই বিজেপির পদাধিকারীরা বৈঠকে বসেন।
সেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যোগ দেওয়া দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে বিজেপি অন্ততপক্ষে ২৫টি আসনে জিতবে। যে বিষয়টিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।
সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা-সহ শীর্ষ নেতৃত্বকে বাংলা থেকে পঁচিশ আসনে জেতার ব্যাপারে ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন সুকান্ত। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে সুকান্ত বিষয়টি নিয়ে বলেন,” পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে অন্তত পঁচিশটি আসনে জিতব। ভদ্রলোকের এক কথা”।
সুকান্ত যে কথা বলেছেন তা অত্যন্ত হাস্যকর বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই সময় বিজেপির পক্ষে প্রবল হওয়া ছিল বাংলা জুড়ে। যার ছিটেফোঁটাও এখন দেখা যাচ্ছে না।
একের পর এক নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলিতে বিজেপি ধরাশায়ী হচ্ছে এ রাজ্যে। বেশিরভাগ জায়গায় বিজেপিকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে সিপিএম তথা বামেরা। তাই দু’বছরের মধ্যে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ার মতো এমন কি ঘটবে যাতে বিজেপি গতবারের থেকে ভাল ফল করবে? এই প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠছে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ লবিকে চাপে রাখতেই সুকান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে এমন দাবি করেছেন। কারণ মাসখানেক আগেই দিলীপ নাম না করে সুকান্তকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আগে চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়ে দেখান।
উল্লেখ্য গত লোকসভা নির্বাচনে তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপি চল্লিশ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮টি আসন জিতেছিল। তাই এটা স্পষ্ট শুধু শাসক দল তৃণমূল নয়, সুকান্তকে লড়াই করতে হচ্ছে দিলীপ ঘোষ লবির সঙ্গেও। তাই সব মিলিয়ে একটা ঝটকা দেওয়ার জন্যই তিনি এমন দাবি করেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আর সুকান্তর এমন দাবি নিয়েই পাল্টা তাঁকে কটাক্ষ করেছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সুকান্তর এই দাবি প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘উনি আমাকে এই বিষয়টা কি লিখে দিতে পারবেন যে, বিজেপি এ রাজ্য থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ২৫টি আসন জিতবে? আমাকে লিখে দিতে হবে যে, যদি এটা না হয় উনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
আর রাজ্যে ২৫টি আসন না পেলে কান ধরে ওঠবোস করবেন তো।!’ এখানেই থামেননি ফিরহাদ। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এ রাজ্য থেকে বিজেপি ২০২৪ সালে এক থেকে দু’টির বেশি আসন পাবে না। আমরা চাইছি, সেই আসনটিকে শূন্যে পাঠিয়ে দিতে, যাতে বিজেপি আর এ রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এখন হয়ত তাঁরা বিরোধী দলের জায়গা পেয়েছেন।
কিন্তু যেভাবে বিজেপিতে দিন দিন ভাঙন হচ্ছে, তাতে বিজেপি কোনও ভাবেই ২৫টি আসন তো দূর, কোনও আসনই ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আর বিজেপি যদি ২৫টির বেশি আসন পায়, তাহলে আমি কান ধরে ওঠবোস করব।’’ লোকসভা নির্বাচনের এখনও দু’বছর বাকি। তার আগে সুকান্ত মজুমদার দলকে কতটা চাঙ্গা করতে পারেন, আর কতটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেন, সেদিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের।