ধীরে ধীরে আরো খারাপ হয়ে উঠছে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি। এই মুহূর্তে মূলত অগ্নিগর্ভের সৃষ্টি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট এবং গণআন্দোলনের শিকার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবং পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার করে শেষমেষ বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
বৃহস্পতিবার রাতেই শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে খবর। আর সেই চিঠি সরকারিভাবে গ্রহণ হতেই নয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন স্পিকার ইয়াপা আবেওয়ারদানা। শুক্রবার সকালেই লঙ্কান সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে আগামী সাত দিনের মধ্যেই দেশ পেতে চলেছে নতুন প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পরেই দেশের বিক্ষুব্ধ জনতা উচ্ছাসে ফেটে পড়েছেন বলে খবর। এই প্রচন্ড সংকটের মধ্যেও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রান্তে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খুশিতে উৎসব পালন করতে দেখা গিয়েছে। এমনকি প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও বিক্ষোভ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ।
কিন্তু এই মুহূর্তে প্রশ্ন হচ্ছে আগামী ২০ জুলাই দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন কে? জানা যাচ্ছে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে শেষ পর্যন্ত কার মুখে হাসি টিকে থাকে এখন সেটাই দেখার।
বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী অনিল বিক্রম সিংহ। তবে কূটনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, শুধু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, এমনি নয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই লড়াইয়েও কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
এছাড়াও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে আছেন ৫৫ বছরের সাজিদ প্রেমদাসা। তিনি বিরোধী দল সামাগি জন বালায়িগেয়া দলের নেতা। তাঁর সমর্থনে রয়েছে ৫০ জন পার্লামেন্টের সদস্য। অন্যদিকে আগামী এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন মোট ২৫৫ জন। উল্লেখ্য সাজিথের বাবা রনসিংহে প্রেমদাসা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ থাকাকালীন ১৯৯৩ সালে তামিল জঙ্গিগোষ্ঠী এলটিটিইর বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনিও বেশ পোক্ত।
অন্য দিকে, সাজিথের দল সমগি জন বলবেগয়ার (এসজেবি)-এর ৫৪ জন সদস্য পার্লামেন্টে রয়েছেন। বৃহত্তম তামিল দল টিএনএর ১০ সদস্যের সমর্থনও তাঁর পাশে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্য ছোট দল ও ৪৫ জন স্বতন্ত্র সদস্যের সমর্থন যদি তাঁর দিকে ঘোরে তাহলে আগামী লঙ্কান প্রেসিডেন্ট হতে তাঁর আর কোনও বাধাই থাকবে না। এছাড়াও লড়াইয়ে রয়েছে রাজাপক্ষের দল। শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের ২৫৫ জন সদস্যের মধ্যে রাজাপাকসের দল শ্রীলঙ্কা পড়ুজনা পেরমুনার (এসএলপিপি) সদস্য সংখ্যা ১০০। সেক্ষেত্রে এই দলের কোনও সদস্যও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিতে পারেন।