রাজ্যের গরুপাচার কাণ্ড, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মতোই যত তদন্ত হচ্ছে তত উঠে আসছে একের পর এক নতুন তথ্য৷ এই গরু পাচার চক্রের জাল বিস্তৃত বহুদূর পর্যন্ত৷ জেরায় ক্রমশ খুলছে সেই জট৷
সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বীরভূমে তৃণমূলে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ তাঁকে গ্রেফতার করার আগেই সিবিআই-এর জালে ধরা পড়েছেন দেহরক্ষী সায়গল হোসেন, ব্যবসায়ী এনামুল হক, বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার৷
তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ সিবিআই-এর কাছে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, গরু পাচারচক্রের খুঁটি পোতা ছিল বীরভূমের মাটিতেই৷ লাল মাটি থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত চোরা চালানের কারবার৷
সিবিআই জানাচ্ছে, অনুব্রতর হয়ে ‘ডিল’ করতেন তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। অন্যদিকে, গরুপাচারচক্রের কিংপিন এনামুল হকের হয়ে ‘ডিল’ সামলাতেন ইলামবাজারে গরু হাটের দালাল আব্দুল লতিফ।
তাঁরাই বীরভূম-মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গার গরু পাচার নিয়ন্ত্রণ করতেন। এছাড়া সিবিআইয়ের নজরে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, গুসকরার পশুহাট। এই তিনটি এলাকারই পর্যবেক্ষক ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
সিবিআই সূত্রে খবর, জঙ্গিপুরের কাস্টমস হাউজে এনামুল হকের হয়ে ১৬ বার গরু কেনাবেচার নিলামে অংশ নিয়েছিলেন আবদুল লতিফ। সেই গরুও পাচার করা হয়েছিল ওপাড় বাংলায়।
এর জন্য ৭০-৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল৷ পাচারের তথ্য লুকাতে সাহায্য করতেন লতিফেরই এক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মন্টু মল্লিক। তাঁর নামেও জড়িয়েছে এই মামলায়। সিবিআই প্রত্যেকের থেকে আলাদা ভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে।
সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকায় যে গরু পাচার চক্র সক্রিয় ছিল, তা পুরেপুরি নিয়ন্ত্রিত হত বীরভূম থেকে। অনুব্রতর হয়ে এই কাজ সামলাতেন সায়গল হোসেন৷
সূত্রের দাবি, সায়গলের মা লতিফা খাতুনের নামে থাকা একটি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে৷ যা দু’-দু’বার হাতবদল হয়ে তাঁর কাছে আসে৷ শুধু তাই নয়, এই সম্পত্তি অনেক কম দামে কেনা হয়েছে বলেও নথিতে দেখানো হয়।
এই সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে সায়গল হোসেনকে সাহায্য করেছিলেন আব্দুল লতিফ। বিনিময়ে বীরভূমের ইলামবাজারের পশু হাট থেকে যাতে কম দামে গরু কেনা যায়, সেই বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন সায়গল৷ এবং সবটাই তিনি করেছিলেন অনুব্রতর হয়ে৷
এদিকে, অনুব্রত-কন্যার সম্পত্তি সহ তাঁর আত্মীয়দের প্রায় ১৭ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ফ্রিজ করেছে সিবিআই। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ৬ টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে নোটিস পাঠানো হয়৷
অন্যদিকে, সায়গলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে৷ এনিয়ে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে গরু পাচার মামলায় তিনটি চার্জশিট জমা পড়েছে। চার্জশিটে নাম রয়েছে বিকাশ মিশ্র, সায়গল হোসেন ও আব্দুল লতিফের।