সম্প্রতি চাকরিকে কেন্দ্র করেই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গোটা রাজ্য৷ সরকারি নার্সের চাকরি পাওয়ার ‘অপরাধে’ স্ত্রীর হাতে কেটে ‘শাস্তি’ দিয়েছে স্বামী৷ কেতুগ্রামের এই নৃশংস ঘটনা গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলেছে৷ রাজ্য সরকার ডান হাত কাটা পূর্ব বর্ধমানের রেনু খাতুনকে নন নার্সিংয়ের চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নবান্নে রেনুর চাকরি প্রসঙ্গে জানালেন, তার নিজের জেলাতেই রেনুকে স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে কোথাও নন নার্সিং এর কাজে লাগানোর জন্য ইতিমধ্যেই নিয়োগপত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। হাত কাটা যাওয়ায় সে নার্সিংয়ের কাজ করতে পারবে না বলেই তাকে নন নার্সিং এর কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি এই ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয় তার প্রতিও নজর দেওয়া হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, রেণুকে সেই সরকারি চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে নিয়োগপত্রও তৈরি হয়ে গিয়েছে। মমতা বলেন, ‘’আমরা রেণুকে পূর্ব বর্ধমানে নন নার্সিং কাজে লাগাচ্ছি। ওর ডানহাত না-থাকায় ও নার্সের কাজ করতে পারবে না। অন্য কোনও কাজ করবে।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রেণু খাতুন জিএনএম পাস করেছেন৷ রেণুকে পূর্ব বর্ধমানে পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে৷ নার্সিং গ্রেডে অনুযায়ী ২৯ হাজার ৮০০ টাকা বেতন পাবেন রেণু৷ হাত খোয়া যাওয়ার কারণে নার্সিং না করে তাঁকে অন্য কোনও কাজ করানো হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ ইতিমধ্যেই অফার লেটারটা ইস্যু করা হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এরপরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের যাতে কঠোর শাস্তি হয়, তার প্রতিও নজর দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘যাদের ধরা হয়েছে, তাদেরও কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
শনিবার রাতে রেণুর ডান হাতটি কব্জি থেকে কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্বামী শের মহম্মদের বিরুদ্ধে। পুলিশ শের মহম্মদকে গ্রেফতার করেছে বুধবার। রেণুর হাত কেটে নেওয়ার বিষয়ে তাঁর স্বামী আরও দু’জনের ‘সহায়তা’ নিয়েছিল। তাদেরও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রেণু আপাতত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডান হাত কার্যত অকেজো হয়ে যাওয়ায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই বাঁ’হাতে লেখা অভ্যাস করা শুরু করেছেন রেণু। বুধবারেই মুখ্যমন্ত্রী রেণুর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, রেণুর উপযুক্ত কাজ, চিকিৎসার খরচ এবং কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করবে সরকার। তিনি বলেছিলেন, ‘রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় গিয়ে দেখা করেছেন ওই তরুণীর সঙ্গে। নার্সিং পরীক্ষার প্যানেলের ২২ নম্বরে নাম ছিল ওই তরুণীর। তার ডান হাত নেই। তাই সে যে কাজটা করতে পারে, আমরা তারই ব্যবস্থা করব।’