শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও গরুপাচার কাণ্ডে পর কয়লা পাচার কাণ্ডে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত কয়েক মাসে তদন্তে অনেকটাই গতি বাড়িয়েছে তারা। যার মাধ্যমে হাতে এসেছে নিত্যনতুন তথ্য।
এরই মধ্যে গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর আরও অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল সরকার। এই পরিস্থিতিতে কয়লা পাচার মামলায় এবার তৎপরতা বাড়াল রাজ্য প্রশাসন। ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত খনি অঞ্চলের তিনটি থানার দায়িত্বে থাকা দশ পুলিশ অফিসারকে জেরা করতে চায় সিআইডি। শুরু হয়েছে জেরা পর্ব।
কয়লা পাচার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি গ্রেফতার করেছে আব্দুল বারিক বিশ্বাস-সহ আট জনকে। তাঁদের জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। এবার তার ভিত্তিতেই কয়লা পাচার কাণ্ডে আসানসোল খনি অঞ্চলের তিনটি থানার ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর পদের দশ জনকে সিআইডি তলব করেছে।
ভবানী ভবানী তাঁদের জেরা করা হবে। শনিবার পর্যন্ত চলবে এই জেরা পর্ব। উল্লেখ্য গয়লা পাচার মামলায় ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার মধ্যেই তদন্তে গতি বাড়াল রাজ্য। এই পুলিশ অফিসারদের জেরা করে সিআইডি জানতে চাইছে কয়লা পাচার কাণ্ডে থানাগুলির নিচুতলার কোনও পুলিশকর্মীর যোগ ছিল কিনা।
এর পাশাপাশি পাচার চক্রের মূল চক্রীদের সম্পর্কে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে আছে কিনা সেটাও জানতে চাইবেন সিআইডি আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার তিন পুলিশ অফিসারকে জেরা করা হয়েছে।
শুক্রবার তিনজন এবং শনিবার আরও চার জনকে জেরা করা হবে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে কয়লা পাচার মামলায় তদন্তে গতি বাড়িয়ে রাজ্য সরকার এই বার্তাই দিতে চায় যে, তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। এভাবে রাজ্যবাসীর কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায় নবান্ন।
যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, শুধু কয়লা পাচার নয়, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন এতদিন গা ঘামায়নি কেন? তবে কি পরিস্থিতির চাপেই রাজ্য সরকার এমন পদক্ষেপ করছে? সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন।
পঞ্চায়েতে সাফল্য পেতে নিজেদের স্বচ্ছ ইমেজ তুলে ধরতে চায় রাজ্য। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে এমন চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে এখানেই শেষ নয়, রাজ্য সরকারের অফিসার, আমলাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন নবান্ন।
এবার থেকে সঠিক সময়ে সম্পত্তির হিসেব দিতে হবে তাঁদের। কিন্তু এমন নির্দেশ কেন দেওয়া হল? বিষয়টি নিয়ে আমলা মহলের বক্তব্য এই নির্দেশ আগেও জারি করা হয়েছিল। এখন তাতে শুধু বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা কেন?
আসলে ইডির তালিকায় এই রাজ্যের কয়েকজন আইপিএসের নাম উঠে এসেছে। দিল্লিতে রাজ্যের আট পুলিশ কর্তাকে তলব করেছে ইডি। কয়লা কেলেঙ্কারিতে তদন্তের কারণেই তাঁদের দিল্লি তলব করেছে ইডি। উল্লেখ্য বাম আমলে সম্পত্তির হিসেব নিয়ে অনেক কড়াকড়ি ছিল।
তৃণমূল সরকার আসার পর প্রথম দিকেও রাজ্য সরকারি অফিসাররা নিয়মিত সম্পত্তির হিসেব দিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেটা ঠিকঠাক মানা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাঁড়াশি চাপে তৃণমূলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
তাই নতুন করে অফিসার, আমলাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত হিসেব দিতে বলেছে নবান্ন। এভাবেই স্বচ্ছতা দেখাতে চায় রাজ্য সরকার। এই বিষয়গুলি জনমানসে কতটা প্রভাব ফেলে এখন সেটাই দেখার।