টেস্ট পরীক্ষার ঘোষণায় বিরোধিতা শুরু হলো রাজ্যে

করোনা সংক্রমণের আবহে দীর্ঘ দেড় বছরের বন্ধ থাকার পর সদ্দ্যই খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এদিকে স্কুল খোলার ১৫ দিনের মধ্যেই মাধ্যমিকের টেস্ট নেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ১৩ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে পরীক্ষা৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আচমকা এই সিদ্ধান্তে চরম বিপাকে পড়েছেন বাংলার কয়েক লক্ষ পড়ুয়া৷ কেননা, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল স্কুল৷ নানান টানাপোড়েনের পর গত ১৬ নভেম্বর থেকে খুলেছে স্কুল৷ আর স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে টেস্টের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ত৷ মাধ্যমিকের টেস্ট পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইতিমধ্যেই বাংলার বিভিন্ন স্কুলে ছড়িয়ে পড়ছে পড়ুয়াদের অসন্তোষ৷ স্কুল চত্বরে শুরু পড়ুয়া বিক্ষোভ৷

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাধ্যমিকের টেস্ট হবে ৯০ নম্বরেই৷ স্কুল তৈরি করবে প্রশ্নপত্র৷ পরীক্ষার দিন সেই প্রশ্নপত্র পর্ষদের নির্দিষ্ট ই-মেল আইডিতে পাঠিয়ে দিতে হবে। প্রশ্নপত্র তৈরি হবে পর্ষদের বেঁধে দেওয়া নম্বর বিন্যাস অনুযায়ী৷ বিভিন্ন স্কুলের প্রশ্নপত্র দিয়ে টেস্ট পেপার প্রকাশ করবে পর্ষদ৷ আগামী ১৩ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে পরীক্ষা৷ স্কুল খোলার ১৫ দিনের মধ্যে টেস্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে৷

আচমকা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মাধ্যমিকের টেস্ট পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে বুধবার ধূপগুড়ি গার্লস স্কুলের ছাত্রীরা বিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত করেন৷ ছাত্রীদের দাবি, আচমকা টেস্ট নেওয়া বিষয়ে স্কুলের তরফে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র সপ্তাহ ৩ হল হল স্কুল খুলেছে, এই কয়েকদিনের মধ্যেই কি করে টেস্টে বসবেন তাঁরা? তাঁদের যুক্তি করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল স্কুল। এর ফলে পড়াশোনা সেভাবে হয়নি। ঠিকমতো হয়নি অনলাইন ক্লাস৷ হয়নি সিলেবাস শেষ৷ তারউপর ৯০ নম্বরের পরীক্ষা কীভাবে?

আন্দোলনকারী শুভজিৎ গরাই, নীপা কর্মকার , মানস পাল-রা বলেন, ‘‘আমাদের দাবিপূরণ না হলে আমরা লাগাতার অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাব৷’’ পড়ুয়াদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি৷ তবে, স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষা পিছানোর বিষয়ে স্কুলের কোন হাত নেই। পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করার সমস্ত কিছুই পর্ষদ করছে। সরকারি নির্দেশ যা আসবে সেই নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হবে। ছাত্রীদের দাবির বিষয়ে অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে স্কুলে৷ জলপাইগুড়ির পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল বাঁকুড়ার তালডাংরার সাবড়াকোন হাইস্কুলের পড়ুয়ারা৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান মাধ্যমিক ও উচ্চমাধিকের পড়ুয়ারা৷

একদিকে যেমন পড়ুয়ারা স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন, ঠিক তেমনই পর্ষদের আচমকা বিজ্ঞপ্তি ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলের অন্দর থেকেই৷ শিক্ষকদের একাংশ এত কম সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়ার কীভাবে সম্ভব? এখনও তো সিলেবাসই শেষ হয়নি৷ সিলেবাস শেষ হওয়ার আগে ৯০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া বা পরীক্ষা দেওয়া কি মুখের কথা?

Leave a Reply