রাজ্যের অলিতে গলিতে বহু প্রতিভা দেখা যায় অবহেলিত হতে৷ স্বীকৃতির অভাবে প্রকাশিত হয়না সেই সব প্রতিভা৷ দিনের শেষে তাঁদের প্রাপ্তি শুধুই অবহেলা৷ তবে এবার সেই দিন পাল্টাতে চলেছে৷ ভুবন বাদ্যকর, রানু মণ্ডলদের সৌজন্যে এরাজ্যের হাটে-বাজারে, স্টেশনে, অলিতে গলিতে অবহেলায় দিন কাটানো পথশিল্পীরা পেতে চলেছেন সরকারি স্বীকৃতি৷
রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে প্রতিটি জেলায় সংশ্লিষ্ট অফিসে এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পথে ঘাঁটে পড়ে থাকা এই ধরনের শিল্পীদের খুঁজে বার করে তাঁদের এক মিনিটের একটি গানের ভিডিও তৈরি করতে হবে৷ তাতে শিল্পীর নাম, ঠিকানা, পেশা, বয়স ও ফোন নম্বর উল্লেখ করে পাঠাতে হবে। লোকপ্রসার প্রকল্পে লোকশিল্পীদের জন্য পেনশনের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। চলার পথে অজানা, অচেনা এই সকল শিল্পীদের অন্ধকারময় জীবন থেকে আলোর দিশা দেখাতে তৎপর সরকার৷ তাঁদেরকেও যোগ্য স্বীকৃতি দিতে চায় রাজ্য সরকার। সেই উদ্দেশেই শুরু হল সরকারিভাবে নথি সংগ্রহের কাজ৷
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল ভুবন বাদ্যকরের ‘কাঁচাবাদাম’ গান৷ সেই গানের হাত ধরেই আজ খ্যাতির শিখড়ে তিনি৷ বীরভূমের বাদাম কাকুর আগে একই ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রানাঘাটের রানু মণ্ডল৷ তাঁর সুরেলা কণ্ঠ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল মুম্বইয়ের ঝাঁ চকচকে স্টুডিয়োতে৷ রাতারাতি খবরের শিরোনামে এসেছিলেন তিনি।
ভুবন-রানুর মতো এ রাজ্যের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু পথশিল্পী৷ গ্রামে- গঞ্জে পড়ে থেকে অবহেলায় দিন কাটে তাঁদের। প্রকৃত মূল্য পায় না তাঁদের প্রতিভা৷ কেউ লোকাল ট্রেনের কামরায়, কেউ আবার স্টেশন বা বাসস্টপে বসেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে৷ কিন্তু, মনে মনে অনেক আশা তাঁদের৷ গানকে হাতিয়ার করেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখেন তাঁরা। আর্থিক অনটনের মধ্যে আবার বহু শিল্পী গানের চর্চাটা করে যান নিয়মিত। অজ্ঞাত, অখ্যাত সেইসব শিল্পীকে খুঁজে বের করে তাঁদের বায়োডাটা সংগ্রহ করা শুরু করেছে রাজ্য। সেই লক্ষ্যেই প্রত্যেক জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এমনই এক শিল্পীর হদিশ মিলেছে মহিষাদল ব্লকের কমলপুর গ্রামে৷ দৃষ্টিহীন নন্দন মান্না মহিষাদল বাজার এলাকায় গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর কন্ঠ শুনে হতবাক হন পথ চলতি মানুষ৷ নন্দনের কথায়, ‘‘আমাদের মতো অখ্যাত শিল্পীদের পাশে যদি রাজ্য সরকার দাঁড়ায়, তাহলে খুবই ভালো হয়। আমাদের মতো মানুষের কথাও যে মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন, এটাই আমাদের কাছে অনেক।’’ তিনি আরও বলেন, পেটের দায়ে খ্যাতিহীন এই সকল শিল্পীরা সকাল থেকেই ট্রেনে বাসে চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। যাত্রীরা নিজেদের গন্তব্যস্থলে নেমে পড়েন। কিন্তু, আমাদের চলার শেষ হয় না। এক ট্রেনে ছেড়ে আরেক ট্রেনে৷ এক বাস থেকে আরেক বাস৷ এই অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে খুবই ভালো হয়।