বিগত দু বছরের বেশি সময় ধরে সংক্রমনের তান্ডবের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবেও চাপে পড়েছে মধ্যবিত্তরা। বাজার মূল্য থেকে শুরু করে পেট্রল ডিজেল দাম চড়েছে সব কিছুর। এছাড়া সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে অসহনীয় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর যবে থেকে করোনা এসেছে তখন থেকে রেলযাত্রায় প্রবীণদের জন্য যে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় ছিল তা তুলে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি প্রবীণরা যাতে করোনা পরিস্থিতিতে রেল সফর কম করেন সেই লক্ষ্যেই এই পথে হাঁটতে তারা বাধ্য হয়েছে। এতে তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম থাকবে। এমনটাই বোঝাতে চাইছে কেন্দ্র।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় ফেরানো হয়নি। মাস দুয়েক আগে তৃণমূল সাংসদ দেব, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন ওই ছাড় আবার কবে ফেরানো হবে। রেলমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন এখনই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কেন্দ্র। এরপর বিরোধী দলের একাধিক নেতা এই ইস্যুতে চিঠি দিয়েছেন রেলমন্ত্রীকে। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বলাবাহুল্য ছাড় তুলে দেওয়ায় রেলের বাড়তি কয়েক হাজার কোটি টাকা লাভ হয়েছে গত আড়াই বছরে।
একই কথা প্রযোজ্য রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও। এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি উঠে গিয়েছে। আগে ভাল অঙ্কের টাকা ভর্তুকি মিললেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে কুড়ি টাকার নীচে। অর্থাৎ রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি নেই এটা বলাই যায়। তবে বিরোধীদের চাপের কাছে কিছুটা হলেও নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। দেশের নয় কোটি উজ্জ্বলা গ্রাহক দু’শো টাকা করে সিলিন্ডার পিছু ভর্তুকি পাবেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতেও তাঁদের সিলিন্ডার প্রতি ব্যয় করতে হবে প্রায় সাড়ে আটশো টাকা। যা কিনা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলির কাছে খুবই কঠিন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে শুধু এটুকুই নয়, ব্যাঙ্কের সুদ দিন দিন কমছে। যাতে প্রবল সমস্যায় পড়ছেন সিনিয়র সিটিজেনরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার আরও কমাল কেন্দ্রীয় সরকার। ‘এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড’ বা ইপিএফও-এর সুদের হার ৮.১ শতাংশ করার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিল কেন্দ্র। আগে তা ছিল ৮.৫ শতাংশ। গত চার দশকে এ নিয়ে সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছল এই সুদের হার। গত ৪৪ বছরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে এত কম সুদের হার হয়নি। গত মার্চে ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠকে ২০২১-২২-এর জন্য পিএফের সুদ ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশ করা হবে বলে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সেই প্রস্তাবেই এবার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
এরপরই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরাও। তাঁদের যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট আগেই বাড়িয়েছে। এতে বাড়ি বা গাড়ি কেনার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন যারা তাঁদের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে আগের চেয়ে। ইএমআই রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে তাঁদের। কিন্তু ব্যাঙ্কে সাধারণ মানুষ যে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন তাতে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে আমজনতার সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে বলে অভিযোগ উঠছে। সবমিলিয়ে দিন দিন চাপ বাড়ছে আমজনতার উপর। কোন পথে সুরাহা সে প্রশ্নের এখন উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত সবাই।