‘চোখের সামনে থেকে একে একে উধাও হয়ে গিয়েছে কাঠের পাটাতনগুলো। এবার একটা ঘরের একাংশ পুড়েও গেল।’ কথাগুলো বলার সময় কোথায় যেন আবেগবিহ্বল হয়ে পড়ছিলেন কবি সুভান দাস। বলছিলেন, ‘পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় আমরা থাকছি। ব্রিটিশ আমলের ওই ঘরগুলোর কত গল্প দাদুদের কাছ থেকে শুনেছি। খারাপ লাগছে। ওই জায়গারই এখন এই পরিস্থিতি।’ শহর থেকে হারিয়ে গিয়েছে কাঠের ঘর। ডিআই ফান্ড মার্কেটের স্মৃতিবিজড়িত হাটুবাবুর ঘর ও হাট পরিচালনার ঘরটি একসময় সংরক্ষণের চিন্তাভাবনাও করেছিল বাম নিয়ন্ত্রাধীন পুরনিগম। যদিও পরবর্তীতে কোনও উদ্যোগ নজরে পড়েনি। রাতের অন্ধকারে ওই ঘর ভেঙে কাঠ চুরি অব্যাহত ছিল। এরমধ্যেই একটিতে শনিবার রাতে আগুন ধরে যাওয়ায় আরও যেন বিমর্ষ হয়ে পড়ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
ক্ষোভের সুরে তাঁরা বললেন, ‘কারও তরফেই এই ঘরগুলো সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা, নজরদারি না থাকায়, ধীরে ধীরে এই ঘরগুলোই দুর্ভাগ্যজনকভাবে নেশার আসর ও অসামাজিক কার্যকলাপের জায়গা হয়ে দাঁড়াল। কেউই আর এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগই নিল না।’ এদিন কথা হচ্ছিল জয়ন্ত দাস, বিমান দাসদের সঙ্গে। তাঁরা বলছিলেন, ‘হাটবাবুর চলটা উঠে যাওয়ার পর থেকেই দুটো ঘর তালাবন্ধ হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে সামনের খালি জায়গায় বাজার বসতে শুরু করল। তবে এসব কিছুর মধ্যে ঘরের কাঠ চুরির ঘটনাও বেড়ে গেল।’
পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ওই ঘর সংরক্ষণ করার মতো পরিস্থিতি আর নেই বলে জানালেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলার প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘ডিআই ফান্ডের এই ঘরগুলোর জমি আবগারি বিভাগের। আমরা ওই দপ্তরকে একাধিকবার বলেছি ঘরগুলো ভেঙে দিতে। কারণ, এই ঘরগুলোই এখন নেশার আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ফের এ ব্যাপারে দপ্তরকে বলব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, ওই জায়গাটায় একটা সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র করব। তাহলে আর এই সমস্যাগুলো থাকবে না।’ কিন্তু আরও আগে যদি উদ্যোগ নেওয়া যেত, তাহলে ওই ঘরগুলো সংরক্ষণ করা যেত না? গোটা ঘটনাতেই হতাশ লেখক গৌরীশংকর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘ডিআই ফান্ডের ওই দুটো ঘর আমারও জন্মের আগের। শহরে প্রাচীন বস্তু বলে সেরকম কিছু নেই। যাঁরা শহরের ইতিহাস নিয়ে লিখতে চান, তাঁদের কাছে ওই দুটো ঘর সম্পদের মতো ছিল। এভাবেই একে একে সব ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে।’