এই মুহূর্তে বেশ খানিকটা চাপের মধ্যেই আছেন রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা। প্রশ্ন উঠছে একাধিক নেতা মন্ত্রীর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে। সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলা নিয়ে ফের মুখ খুললেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
উল্লেখ্য তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেছেন, তবে কি ভয় পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতারা?
কিছু দিন আগেই রাজ্যের ৬ নেতামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এরপর আবার কেন সাফাই দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে? তবে কি তাঁরা সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছে? এমন প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
ফিরহাদ বলেছেন, “তদন্তে ভয় পাচ্ছি না, সামাজিক সম্মান নিয়ে টানাটানি হলে সবার ভয় লাগে। জেলে থাকতে ভয় নেই। বাংলার অনেক নেতা জেলে ছিলেন। কিন্তু সামাজিক সম্মান রাস্তায় টেনে নামিয়ে দেওয়ার ভয় সবার থাকে”।
এর পাশাপাশি কেন তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত ভাবে হাইকোর্টে গিয়েছি। তার কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যদি দেখি বিচারব্যবস্থা আমার সঙ্গে ন্যায়বিচার করছে না, তা হলে আমি তার কাছেই সেটা চাইতে যাব। ন্যায়বিচার পাচ্ছি না মনে হলে আমি আদালতের কাছেই আবেদন করব। না হলে আমি যাব টা কোথায়?’’
সেই সঙ্গে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সিপিএমের প্রসঙ্গ তুলে কলকাতার মেয়রের সংযোজন, ‘‘আমি তো বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব না। আমরা তো আর সিপিএমের মতো বিচারপতি লালা, বাংলা ছেড়ে পালা বলতে যাব না৷”
তৃণমূলের ১৯ নেতা-মন্ত্রীর সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যেভাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডিকে পক্ষ করেছে, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। কিছুদিন আগেই বিষয়টি নিয়ে ফিরহাদ-সহ তৃণমূলের ছয় মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
এরপরই তাঁরা রায় পুনর্বিবেচনার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর গোটা ঘটনাটি নিয়ে বিরোধীদের এদিন নিশানা করেছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরে বিরোধী দলের বন্ধুরা অসভ্যতা করছেন। আইন আইনের পথে চলবে। তদন্ত চলবে, কেউ অন্যায় করলে শাস্তি পাবে। তার মানে এই নয় তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই খারাপ। আমাদের সামাজিক সম্মান আছে। তা হরণ করার অধিকার ভারতের সংবিধানও দেয়নি”।
সেই সঙ্গে ফিরহাদের সংযোজন, ‘‘আমি বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, গুলির সামনে বার বার দাঁড়িয়েছি, নন্দীগ্রামে লড়াই করেছি, সিঙ্গুরে আন্দোলন করেছি, একুশে জুলাই আন্দোলন করেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কেশপুর গিয়েছি, চমকাইতলা গিয়েছি, যেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসার কথা ছিল না। কিন্তু তাতেও ভয় পাইনি, কারণ সেখানে সামাজিক সম্মানহানি হওয়ার বিষয় ছিল না। একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কিন্তু সামাজিক সম্মান যাওয়ার ভয় সবার থাকে। আর সেই সামাজিক সম্মান গেলে আপনার বাড়ির লোক ভুক্তভোগী হয়। সমাজ দায় ভোগ করে।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল এত কথা কেন বলতে হচ্ছে কলকাতার মেয়রকে? সত্যিই যদি বিষয়টি নিয়ে ভয় না পেয়ে থাকবেন তাহলে সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় ইডি পক্ষ হলে তাঁদের অসুবিধাটা কোথায়? এই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। কেউ যদি নিজের সম্পত্তি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলে তো তাঁর আদালতে না গিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা উচিত। এই যুক্তি দিচ্ছেন অনেকেই। মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র অস্বাভাবিক হারে কারও সম্পত্তি বৃদ্ধি বা লেনদেন হয়ে থাকলেই ইডি সেটির তদন্ত করে। তাই রাজ্যের ১৯ নেতামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় যেভাবে হাইকোর্ট ইডিকে পক্ষ করেছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই কারণেই ফিরহাদের সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই অবস্থায় মামলার পরবর্তী শুনানির দিকে নজর থাকবে সবার।