গতিবেগ কি বাড়ছে পৃথিবীর? বদলে যাচ্ছে কি সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময়? পৃথিবী অবিরত সূর্যকে প্রদক্ষিন করে চলেছে৷ আমরা ছোট থেকেই জেনে এসেছি যে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা৷ সৃষ্টির শুরু থেকে এমনটাই ঘটেছে৷ আর আমরা প্রত্যেকেই ছোট থেকেই ভূগোল বইতে তেমনটাই পড়ে এসেছি৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে সময়ের আগেই সূর্যকে প্রদক্ষিন সম্পন্ন হচ্ছে পৃথিবীর৷
কিন্তু, এবার কি চিরাচরিত সেই ধারণা বদলে যেতে চলেছে? অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, গত ২৯ জুন পৃথিবীর গতি ছিল অনেকটাই বেশি৷ ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১.৫৯ মিলিসেকেন্ড কম সময়েই সূর্যের চারিদিকে এক পাক ঘুরে ফেলে পৃথিবী৷ সম্পূর্ণ হয় এক দিন! যা সর্বকালীন রেকর্ড৷
তবে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷ ২০২০ সালের ১৯ জুলাই, ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১.৪৭ সেকেন্ড আগে দিন সম্পন্ন হয়! গত ২৬ জুলাইও ২৪ ঘণ্টার থেকে ১.৫০ মিলিসেকেন্ড কম সময়ে সূর্য প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করে পৃথিবী। কিন্তু এবার, সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গেল।
১৯৭৩ সাল থেকে পারমাণবিক ঘড়ির মাধ্যমে পৃথিবীর প্রদক্ষিণে কতটা সময় লাগছে তা পর্যবেক্ষণ করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস’ বা ‘আইইআরএস’ নামক সংস্থাই মূলত এই কাজ করে থাকে।
কয়েক বছর আগ পর্যন্ত ‘আইইআরএস’-এর বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল ক্রমশ ধীর হচ্ছে পৃথিবীর গতি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, দিনের দৈর্ঘ্য ক্রমেই ছোট হচ্ছে। এবং গত ২৯ জুন সবচেয়ে কম সময়ে সূর্যের চারপাশে এক পাক সম্পন্ন করে পৃথিবী।
কিন্তু, কেন এমন হচ্ছে?
এর কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। কারও কারও ধারণা বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে যে ভাবে মেরু প্রদেশের বরফ গলতে শুরু করেছে, তার জন্যই এমনটা হচ্ছে। এক দল বিজ্ঞানীর মতে, পৃথিবীর অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ সরে যাওয়াই এর নেপথ্য কারণ।
ভৌগোলিক ভাবে পৃথিবীর গতি বৃদ্ধির ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, প্রযুক্তিগত দিক থেকে দেখলে এর পরিণাম হতে পারে ভয়ঙ্কর। যে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি পৃথিবীর চারদিকে পাক খাচ্ছে, পৃথিবীর গতিবেগ বৃদ্ধির ফলে সেগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
যেমন ধরুন, পৃথিবীর গতি আধ মিলিসেকেন্ড বদলে গেলেই, নিরক্ষীয় অঞ্চলে উপগ্রহগুলির অবস্থান প্রায় ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত সরে যেতে পারে। এর ফল হতে পারে গুরুতর৷ কারণ, ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে জিপিএস প্রযুক্তি এবং আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেকটাই নির্ভর করে এই উপগ্রহগুলির উপর। ফলে এই উপগ্রহগুলি ক্ষতিগ্রস্ত নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা৷