অতিক্রম করে চলছে সময়, প্রায় চার মাসের কাছাকাছি পৌঁছাতে চললো রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিশেষ সামরিক অভিযানের নাম করে ইউক্রেনে যে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ সেনা তা দীর্ঘ চার মাস পরেও বহাল। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ২৫-৩০ শতাংশ দখল করেছে রুশ সেনা। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ, একাধিক ছবির মত শহর ধ্বংস হয়েছে এক লহমায়। রাতারাতি ঘরছাড়া হয়ে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সর্বহারা হয়ে প্রতিবেশী দেশের উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দেশের অধিকাংশ নাগরিক।
এমতাবস্তায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ালেন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ। জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি এই জনপ্রিয় সাংবাদিক বিশ্ব শান্তির জন্য পাওয়া তাঁর নোবেল পুরস্কারটিই নিলামে তুলছেন এবং সেই নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশুদের জন্য খরচ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। রাশিয়ার এই সাংবাদিকের এমন মহানুভবতায় কার্যত হতবাক গোটা বিশ্ব। সরকারি হিসাবে যে দেশ শত্রু, সেই দেশের নাগরিক তথা শিশুদের জন্য দিমিত্রির এত বড় আত্মহত্যা রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে।
জানা যাচ্ছে, গত বছরই শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছিলেন রাশিয়ার এই সাংবাদিক। এরপরেই তিনি একটি সংবাদপত্রের দপ্তর খুলেছিলেন। এই দফতর থেকে প্রকাশিত হত ‘নোভোয়া গ্যাজেতা’ নামের একটি পত্রিকা। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরুর পরেই মার্চ মাসে রুশ সেনা এই দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের দফতরে হানা দেয় এবং বলপূর্বক বন্ধ করে সংবাদপত্রের প্রকাশনা। অন্যান্য বেশকিছু সংবাদপত্র দপ্তরের মত দিমিত্রের সংবাদপত্র দফতরেও হানা দিয়েছিল রুশ বাহিনী এবং সেনার দাবি ছিল দিমিত্রি সরকারবিরোধী খবর প্রকাশ করছে। যদিও ততদিনে আন্তর্জাতিক মহলে রুশ সেনার একের পর এক কুকীর্তি ফাঁস করার জন্য দিমিত্রির সংবাদপত্র যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এরপরেই রাতারাতি রুশ সরকারের তরফ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয় যে সরকার বিরোধী কথা বলতে মুখ খুললেই জেলে পাঠানো হবে। কিন্তু তার পরেও দিমিত্রির নির্ভীক সাংবাদিকতা চলেছে তার নিজের ছন্দেই। আর এবার দেশের সেনার বিরুদ্ধে কলম তোলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় দিমিত্রি জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ তিনি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না এবং এই যুদ্ধে যে সমস্ত শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কথা ভেবে তিনি নোবেল শান্তি সম্মান পদক নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইউক্রেন জুড়ে যে ধ্বংসলীলা চলছে তাতে ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সিংহভাগই যেমন এই মুহূর্তে ঘর ছাড়া, তেমনি কয়েক হাজার শিশু একের পর এক রুশ হামলায় নিজের পরিবার পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়ে রাতারাতি অনাথ হয়েছে। এরমধ্যেই সম্প্রতি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেন যে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রুশ আগ্রাসন শুরু হবার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় শিশুকে অপহরণ করেছে রুশ সেনা এবং তাদের বলপূর্বক দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন জেলেনস্কি।