চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে বিক্ষোভ বহু দিনের। এই বিক্ষোভ চলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন চাকরিপ্রার্থীরা । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে কাতর আবেদন রেখেছেন ধর্নারত বঞ্চিত হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীগণ সহ তাদের অভিভাবকরা। ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে নবম-দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ চাকরি থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের যে ধর্না চলছে আজ তার ১২৩ তম দিন। একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীগণ। তারা জানিয়েছেন যে, ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন নবম-দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নিয়েছিল। উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকা ভুক্ত হয়েও চাকরিতে নিয়োগপত্র পাননি তারা।
বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নবম-দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। গেজেটে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও চাকরি প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করেননি কমিশন। ১:১.৪ অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের রেসিও সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সাধারণ মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত প্রভৃতি বিষয়ে নতুনভাবে আবার নতুন প্রার্থীদের অবৈধভাবে মেধাতালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপডেট শূন্যপদে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়নি। তাদের আরও বক্তব্য, লকডাউনের মেধাতালিকা ভুক্ত সামনের দিকে থাকা চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ না করেও মেধাতালিকায় থাকা অনেক পিছনের দিকের চাকরি প্রার্থীদের র্যাঙ্ক ড্রপ করে চাকরিতে নিয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। পাশাপাশি মেধাতালিকায় কোথাও নাম না থাকা ফেল করা বহু প্রার্থীদের অবৈধভাবে নিয়োগ করেছে কমিশন। ফলে যাদের নিয়োগপত্র পাওয়ার কথা ছিল, তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ লাগাতার প্রতিবাদ করে চলেছেন ২০১৯ সাল থেকে। প্রথম দফায়, ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেস ক্লাবের সামনে ২৯ দিনের অনশন। দ্বিতীয় দফায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নম্বর গেটের সামনে ১৮৭ দিনের অবস্থান বিক্ষোভ ও অনশন। তৃতীয় দফায়,২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্না চলছে। তারা বলছে, ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেস ক্লাবের সামনে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ব্যানারে অরাজনৈতিক ভাবে যে ২৯ দিনের অনশন হয়েছিল, সেই অনশন মঞ্চে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, মেধাতালিকা ভুক্ত কোনো প্রার্থীই বঞ্চিত হবে না।
প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করে হলেও মেধাতালিকা ভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হবে। শিক্ষক নিয়োগ সক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনিক স্তর থেকে ৫ জন এবং অনশনরত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের মধ্য থেকে ৫ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যে কমিটি আলোচনার মাধ্যমে উক্ত সমস্যার সমাধান করবে এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু এককালীন দেখা গেছে বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের পাঁচ জন প্রতিনিধিগণ নিজেরা সহ তাদের ঘনিষ্ঠ চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে অবৈধভাবে র্যাঙ্ক ড্রপ করে চাকরিতে নিয়োগপত্র নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধান এখনও পর্যন্ত হয়নি।
আবার ২০২১ সালের ১০ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভশঙ্কর সরকার বার্তা দিয়েছিলেন যে, কমিশন মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের বিষয়টি পজিটিভ দিক থেকে দেখছেন। উক্ত সমস্যার সমাধান করতে ৪০ দিন সময়ও নিয়েছিল কমিশন। কিন্তু হয়নি সমস্যার সমাধান। তাই বাধ্য হয়ে মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ মহামান্য হাইকোর্টের কাছে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসার পারমিশনের অর্ডার নিয়ে ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শান্তি পূর্ণ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্না মঞ্চে এবার বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের অভিভাবকরাও আসতে শুরু করেছেন বাড়ি ছেড়ে। এদিকে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন গুলি বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করার আশ্বাসও দিয়েছে।