সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের সম্পর্কের আড়ালে অপহরণের ষড়যন্ত্র ফাঁস করল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের মাটিগাড়া থানার পুলিশ। অপহৃত নাবালিকাকে উদ্ধার করে অপহরণের ষড়যন্ত্রী মা ও ১৭ বছরের নাবালক ছেলেকে গ্রেপ্তার করলো শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জানা গিয়েছে অপহৃত ওই নাবালিকাকে প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নাবালক। এরপর সুপরিকল্পিতভাবে অভিযুক্ত মা ও ছেলে মিলে জয়পুরে বসে নাবালিকাকে বাড়ি থেকে পালাতে প্ররোচিত করে এবং অপহরণের নাটক সাজায়। পরে নাবালিকার পরিবারের কাছ থেকে ২০লক্ষ টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মাটিগাড়া থানার পুলিশ নাবালিকাকে উদ্ধার করে। ধৃত মায়ের নাম প্রীতি শর্মা। মা তার নাবালক ছেলেকে এই কাজে ব্যবহার করে। ঘটনায় নাবালক ছেলেও গ্রেফতার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,গত ১৯ তারিখ মাটিগাড়া থানার অন্তর্গত এলাকা থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। তার পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর,২০ সেপ্টেম্বর মাটিগাড়া থানায় নাবালিকার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নাবালিকার খোঁজ শুরু করে। এরই মধ্যে নাবালিকার পরিবারের কাছে একটি ফোন আসে,যেখানে অপহরণের কথা বলা হয় এবং ২০লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। নাবালিকা নিখোঁজের ঘটনায় মুক্তিপণের দাবি আসায় পুলিশ হতবাক হয়ে যায়। কারণ,পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিল নাবালিকা হয়তো রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তবে এই নিখোঁজের পেছনে এত গভীর ষড়যন্ত্র আছে,তা পুলিশ জানত না।
মুক্তিপণের ফোন কল আসার পর,মাটিগাড়া থানার পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে নাবালিকার খোঁজ শুরু করে। তদন্তের সময় পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে,যেখানে দেখা যায় নাবালিকা টিউশন থেকে বেরিয়ে একাই বাগডোগরা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছে। এটি পুলিশকে প্রথম সূত্র হিসেবে সাহায্য করে। এরপর পুলিশ নাবালিকার ফোনের টাওয়ার লোকেশন শনাক্ত করে এবং জানতে পারে যে নাবালিকা বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে দিল্লি হয়ে জয়পুরে পৌঁছেছে। তদন্ত চলাকালীন পুলিশ আরও জানতে পারে যে মুক্তিপণের জন্য ফোনটি জয়পুর থেকেই করা হয়েছিল। এরপর,তদন্তে জানা যায় যে নাবালিকার অপহরণের পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে, মাটিগাড়া থানার পুলিশ একটি বিশেষ দল গঠন করে রবিবার জয়পুরে যায়।সোমবার মাটিগাড়া থানার বিশেষ দল,জয়পুর পুলিশের সহায়তায় ঐ নাবালিকাকে উদ্ধার করে এবং এক নাবালক সহ তার মা প্রীতি শর্মাকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। ধৃত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে,একটি সামাজিক মাধ্যমে নাবালিকা ও নাবালকের বন্ধুত্ব হয়েছিল। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর নাবালক এবং তার মা ওই নাবালিকাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে জয়পুরে আসার জন্য প্ররোচিত করে।পরে নাবালিকার অপহরণের দাবি করে পরিবারের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ,ধৃত মা-ছেলেকে জয়পুর থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে এসে আজ শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করে। ডিসিপি ট্রাফিক বিশ্বচাদ ঠাকুর জানান, ধৃতদের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।