সদ্য মাত্রই দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে ওই পদে বসেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। এর পরেই ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন দেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
এদিন রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দেশ তথা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি। এদিন বক্তব্যের শুরুতেই দেশ তথা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে মুর্মু বলেন, ‘এই স্মরণীয় মুহূর্তে আপনাদের কাছে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে ভারত ৭৫তম বর্ষ অতিক্রম করছে।“
তিনি আরো বলেন, “১৪ আগস্ট দিনটি, দেশভাগের ভয়ঙ্কর স্মৃতিচারণা’র দিন হিসেবে পালন করা হয় জনগণের মধ্যে সামাজিক ঐক্য, সম্প্রীতি ও ক্ষমতায়ন প্রসারের লক্ষ্যে। আগামীকাল হল এমন একটি দিন যখন ঔপনিবেশিক শাসন-শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করে নতুনভাবে নিজেদের ভাগ্যকে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছিলাম। বছরের এই দিনটি উদযাপনের মুহূর্তে আমরা প্রণতি জানাই সেই সমস্ত নারী-পুরুষদের যাঁদের বিরাট আত্মোৎসর্গ আমাদের স্বাধীন ভারতে বেঁচে থাকাকে সম্ভব করে তুলেছিল।’
এদিন তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র আমাদের কাছেই নয়, বিশ্বের গণতন্ত্রকামী প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই এটি হল উদযাপনের এক বিশেষ মুহূর্ত। দেশের স্বাধীনতাকালে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকের মনেই সন্দেহ দেখা দিয়েছিল ভারতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাফল্য সম্পর্কে। তাঁদের সন্দিগ্ধ হওয়ার কারণও ছিল অবশ্য। সেই সময় অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসরতা সীমাবদ্ধ ছিল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার আওতায় থাকা গুটিকয়েক দেশেই। বহু বছর ধরে বিদেশি শাসন কবলিত ভারতে তখন ছিল দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা। কিন্তু তাঁদের সন্দেহ যে ভুল ছিল তা প্রমাণ করে দিয়েছিলাম আমরা, অর্থাৎ ভারতবাসীরাই। এ দেশের মাটিতে গণতন্ত্র শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিতই হয়নি, তা সমৃদ্ধও হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘প্রিয় নাগরিকবৃন্দ,যে কোনো জাতির পক্ষেই, বিশেষত ভারতের মতো প্রাচীন দেশে ৭৫ বছর অতিক্রম করা চোখের পলক পড়ার মতো ঘটনামাত্র ছিল না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের কাছেই তা এক আজীবনের ঘটনা রূপেই চিহ্নিত। আমাদের মধ্যে যাঁরা প্রবীণ নাগরিক তাঁরা তাঁদের জীবনকালেই সাক্ষী রয়েছেন নাটকীয় পট পরিবর্তনের। তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন স্বাধীনতা উত্তরকালে সকল প্রজন্মেরই কঠিন পরিশ্রমের ঘটনাবলী এবং কিভাবে বড় বড় চ্যালেঞ্জ জয় করে আমরা নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে উঠেছি।
আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নকে আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়িত করে তুলব। আমরা স্মরণ করব বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে যাঁরা দেশের সংবিধান রচনা করেছিলেন তাঁদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে। এক আত্মনির্ভর ভারত গঠনের কাজেই আমরা এখন নিয়োজিত রয়েছি। এক পূর্ণ সম্ভাবনাময় ভারত আমরা গড়ে তুলব।’
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদানও এদিন সকলের সামনে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে, এক নতুন ভারতের যে অভ্যুদয় ঘটছে তা প্রত্যক্ষ করেছে সমগ্র বিশ্বই। অতিমারীর মোকাবিলায় আমাদের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র। মানব ইতিহাসে দেশে উৎপাদিত ভ্যাক্সিনের সাহায্যে বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযানের সূচনা করেছি আমরা।
সার্বিক টিকাকরণের ক্ষেত্রে ২০০ কোটির মাত্রা আমরা অতিক্রম করেছি গত মাসেই। অতিমারীর মোকাবিলায় উন্নত বহু দেশের তুলনায় আমরা সাফল্য অর্জন করেছি অনেক বেশি মাত্রায়। এই সাফল্যের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ দেশের বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, সহায়ক চিকিৎসাকর্মী এবং টিকাকরণের সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মীর কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিমারীর দাপটে সারা বিশ্বেই অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই মহাসঙ্কটকালের অর্থনৈতিক পরিণতির মোকাবিলায় বিশ্ব যখন ব্যস্ত, তখন ভারত তার সমস্ত কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলেছে অগ্রগতির পথে। বিশ্বের দ্রুত বিকাশশীল প্রধান প্রধান অর্থনীতির অন্যতম হল ভারত।’ এদিন দেশের মহিলাদের প্রগতি এবং অগ্রগতি প্রসঙ্গেও বক্তব্য রাখতে দেখা যায় রাষ্ট্রপতিকে। তিনি বলেন, ‘জাতির সবথেকে বড় আশা হল আমাদের কন্যাসন্তানরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমস-এ তাঁরা দেশকে বিজয়মাল্য এনে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ক্ষেত্রে সাফল্যের মধ্য দিয়ে ভারতের ক্রীড়াবিদরা দেশকে গর্বিত করে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই উঠে এসেছেন অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ক্ষেত্রগুলি থেকে। যুদ্ধবিমানের পাইলট থেকে মহাকাশ বিজ্ঞানীর ভূমিকা পালন করে আমাদের কন্যাসন্তানরা এখন নিজেদের উন্নীত করেছেন এক বিশেষ উচ্চতায়।’