আপের উত্থানের সাফল্য

সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া আপের উত্থানে লেগেছে চমক৷ ২০১১ সালে জন লোকপাল বিলের বিরোধিতায় একযোগে আন্দোলনে বসেছিলেন দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও অন্না হজারে৷ কিন্তু ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ আন্দোলনের রাজনীতিকরণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়৷ অন্না এই আন্দোলনকে রাজনীতির সংস্রব থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন৷ তবে কেজরিওয়াল মনে করেছিলেন, সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ এই মতানৈক্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আম আদমি পার্টি’র জন্ম হয়৷ ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হাত ধরে রাজনৈতিক দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ ঘটে আপ-এর৷

রাজনৈতিক দল গঠনের পর থেকেই দিল্লিতে জল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে একের পর এক ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে আপ৷ ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে কেজরির দল৷ এর পর কংগ্রেসের সমর্থনে দিল্লিতে সরকার গঠন করেন কেজরিওয়াল৷ দিল্লিতে দু’বার সরকার গঠন করার পর পঞ্জাবেও ঝাড়ু হাতে সকলকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করল খড়গপুর আইআইটি’র প্রাক্তন ছাত্রের দল৷ ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে বহু দূর এগিয়ে গেল আম আদমি পার্টি৷ অন্যদিকে, একেবারে দুরমুশ কংগ্রেস-বিজেপি৷ 

বাইশের বিধানসভা ভোটে দিল্লির গণ্ডি পেরিয়ে আপের এই উত্থানে স্বভাবতই আপ্লুত দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সেই প্রসঙ্গে একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাঘব চাড্ডা বলেন, ‘জাতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে আপ। এবং অচিরেই কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে উঠবে আমাদের দল৷’ কিন্তু কী ভাবে এই সাফল্য ধরা দিল কেজরিওয়ালের ঝুলিতে? 

পঞ্জাব ভোটে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল ‘দিল্লি মডেল’৷ ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছিল ‘ওপারেতে সর্বসুখ’-এর বিশ্বাস৷ দিল্লিতে পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসা কেজরিওয়াল ম্যাজিক কাজ করে যায় পঞ্জাবেও৷ এছাড়াও বিজেপি-কংগ্রেস বা অকালি দলের মতো কোনও সনাতন দল নয়, বরং পঞ্জাবের মানুষ চাইছিলএক তরুণ দলকে৷ সে ক্ষেত্রে সেরা বিকল্প ছিল আপ৷ অন্যদিকে, ভোটের আগে যে ভাবে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে উঠে এসেছিল, তা দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত করেছে৷ প্রথমে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং এবং পরে চরণজিৎ সিং চান্নির সঙ্গে নভজ্যোৎ সিং সিধুর দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল৷ যা দেখে রাজনীতির কারবারিরা মনে করেছিলেন, ভোটে এর রবিরাট প্রভাব পড়বে৷ আর সেটাই হল৷ 

পঞ্জাব বিধানসভা ভোটে আপের এই জয়ের নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ৷ কেন্দ্রের ‘বিতর্কিত’ তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ পঞ্জাবে যে ভাবে ছুটে বেরিয়েছিলেন আপ নেতারা, তা তাঁদের জয়ের রাস্তা আরও মসৃণ করেছে৷  

উল্লেখ্য, আপ ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই একটি রাজ্যের বাইরে ক্ষমতা বিস্তার করতে পারেনি৷ তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা, ডিএমকে, এআইডিএমকে, সপা, বসপা কেউই রাজ্যের গণ্ডি পার করেনি৷ ইতিহাসকে সাক্ষী প্রথম আঞ্চলিক দল হিসাবে দ্বিতীয় রাজ্যে ক্ষমতা দখল করল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল৷ রাঘব চাড্ডার কথায়, ‘২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া একটা দল ১০ বছরে দুটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে৷ এটা দলের অন্যতম সেরা সাফল্য। বিজেপিকেও দুটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে প্রতিষ্ঠার পর অনেক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।’ তিনি মনে করেন ঈশ্বরের আধীর্বাদে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হবেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালই৷ পঞ্জাবের পাশাপাশি গোয়া এবং উত্তরাখণ্ডে একই স্টাইলে প্রচার চালিয়েছিলেন কেজরিওয়াল৷ পোস্টার, হোর্ডিং, প্রার্থী বাছাই থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নির্বাচন সবটাই সামলেছিলেন একক দক্ষতায়৷